আবদুল মজিদ, চকরিয়া:
একদিকে দেশে চলছে ১৪দিনের কঠোর লকডাউন, অন্যদিকে টানা চারদিনে ভারিবর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল। ফলে চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার অধিকাংশ গ্রামাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যার মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিএমচর ইউনিয়নের কইন্যারকুম, কোনাখালীর মরংঘোনা ও কুরইল্যারকুম পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে বানের পানি ঢুকে উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে গেছে।

 

দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের তীব্র সংকট। সরকারীভাবে বরাদ্দ দেয়া চাল, চিড়া, গুড় প্রয়োজনের তুলনায় অপতুল। ২৯ জুলাই (বৃহস্পতিবার) চকরিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের হালকাকারা গ্রামের আরবাবুল ইসলাম নামে এক শিশু পানিতে পড়ে মারা গেছে।

 

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সূত্রে জানায়, উপজেলার বমূবিলছড়ি, কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, পূর্ববড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, বিএমচর, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, ফাঁসিয়াখালী, চিরিংগা, সাহারবিল, ডুলাহাজারা, খুটাখালী ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের নিন্মাঞ্চল ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে উপকূলীয় শত কোটি টাকার চিংড়ি ঘের ও ক্ষেতের ফসলাদি। ভেঙ্গে পড়েছে অভ্যন্তরীণ গ্রামীণ সড়কগুলো।

 

সাহারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল জানান, বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। তার ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় গ্রামীণ সড়ক ভেঙ্গে পড়েছে।

চিরিংগা ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন জানান, চিংড়ি জোন খ্যাত তার ইউনিয়নে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বানের পানির সাথে হাজার হাজার একর চিংড়ি ঘের ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে।

 

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র মো.আলমগীর চৌধুরী জানান, ৯টি ওয়ার্ডের ৭হাজার পানিবন্দি মানুষের কাছে রান্নাকরা খাবার পৌছা দেয়া হচ্ছে। এভাবে বন্যা অব্যাহত থাকলে খাবার সরবরাহও একই নিয়মে চালু থাকবে।

 

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী জানান, পৌরসভার পাশাপাশি ১৮টি ইউনিয়নে রান্না করা ও শুকনো খাবার পৌছে দেয়া হয়েছে। তিনি বন্যা দূর্গত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। বন্যকবলিত এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমানে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সরকারের উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে।

 

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, বন্যাকবলিত এলাকার জন্য দুই দু”দফায় ১১০ মে:টন চাল বরাদ্দ পেয়েছেন। মাতামুহুরী নদীতে পাহাড়ী ঢলের অতিরিক্ত পানির কারণে সাহারবিলের বাটাখালী নদী পাশে নাপিত পাড়া, কোনাখালী ইউনিয়নের মরংঘোনা ও কুরইল্যারটেক এবং বিএমচর ইউনিয়নের কইন্যারকুম পাউবোর বেড়িবাধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে বেশির ভাগ গ্রাম। গ্রামীণ সড়কগুলো পানির নীচে থাকায় উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভেংগে যাওয়া গ্রামীণ অভ্যান্তরিন সড়ক তলিয়ে যাওয়া চিংড়ি ঘের ফসলের পরিপূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ণয় করা হয়নি। তা নির্ণয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।