সিবিএন ডেস্ক:
বৈশ্বিক মহামারি করোনায় বদলে গেছে জীবনযাত্রার চিত্র। এর প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতেও। তাই করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি এখন মন্দা কাটানোর উপায় খুঁজতে ব্যস্ত বিশ্ব। বাংলাদেশেও একই অবস্থা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বৈশ্বিক এই মহামারির কারণে অর্থনীতির পাশাপাশি রাজনীতি ও সামাজিক প্রেক্ষাপটও বদলে যাবে। তবে করোনার প্রভাবে সমাজে যে আচরণগত পরিবর্তন এসেছে, তাতে মানুষের আরও বেশি স্বার্থপর হওয়ার প্রবণতা দেখতে পাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। সংস্কৃতির পালেও নতুন হাওয়া লাগছে, নতুন ধরনের কন্টেন্ট এই খাতের হাল ধরবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অধ্যাপক সিরাজুল ইসলামের মতে, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশের রাজনীতি একই রকম। তিনি বলেন, ‘আমি দেখছি যে, পৃথিবীটা বদলে যাবে একেবারে। এখানে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। বেকারত্ব, ক্ষুধা, ক্রয়ক্ষমতার অভাব এবং নানারকম সংঘর্ষ, বিরোধ, যেগুলো এখনও চলছে, এগুলো আরও বাড়বে। যে রাজনীতি আমাদের এখানে আছে, যেটাকে আমরা বলে থাকি ‘নির্বাচনের রাজনীতি’, সেটাই এজন্য দায়ী। তাই এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য এখন নতুন ধরনের রাজনীতি দরকার। সেই রাজনীতি হবে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বদল করার রাজনীতি। এই রাজনীতি গোঁজামিল কিংবা সংস্কার দিয়েও চলবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে মানুষের যে সম্পর্ক, উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে সম্পর্ক, মালিকের সঙ্গে শ্রমিকের এখন যে সম্পর্ক, সেটাতেও কুলাবে না। সম্পর্কটা হতে হবে সমবায়ী। একসঙ্গে সবাই মিলে কাজ করার সংস্কৃতিকে আমরা সমাজতান্ত্রিক বলে পরিচয় দেই। পুঁজিবাদী রাজনীতিতে এখন আর কুলাবে না, সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে এখন আসতে হবে। নাহলে আমরা এগুতে পারবো না। আমরা সমাজতন্ত্র থেকে যতই দূরে সরেছি; আমাদের বিপদ, অভাব, বৈষম্য ততই বেড়েছে। শুধু বাংলাদেশে না, সাড়া বিশ্বে করোনা পুঁজিবাদের যে চরিত্র সেটাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। কাজেই নতুন রাজনীতি হতে হবে সমাজতান্ত্রিক।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফ বলেন, “করোনায় দুটি ক্ষেত্রে খুব বড় পরিবর্তন এসেছে। একটি হচ্ছে আমাদের অর্থনীতিতে, ইনফরমাল সেক্টরে মানুষের জীবিকা সাংঘাতিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ‘কিছু একটা’ করে খাওয়া মানুষগুলো ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। কিছু একটা করে খাওয়া যায় না সবসময়, যদি বাকি পরিবেশ সহায়তা না করে। আমরা যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেখানে উত্থানপতনের সঙ্গে আমাদের অর্থনীতিও অনেক ওঠানামা করে। এই পরিবর্তনটি আমাদের কাছে স্পষ্ট।”
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতিতে খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। আরেকটি পরিবর্তন যেটা এসেছে, সেটা হলো সামাজিক প্রেক্ষাপটে। একজন মানুষের সঙ্গে আরেকজন মানুষের মেলামেশা, সময় কাটানো, সব আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। শারীরিকভাবে আমরা একে অপরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি এবং একইসঙ্গে করোনা যে ধরন, সেটা মানুষকে বাধ্য করেছে অন্যের সংস্পর্শে না যাওয়া, খানিকটা স্বার্থপরের মতো আচরণ করা। স্বার্থপর আমরা অনেকেই ছিলাম কিন্তু এই রোগের দোহাই দিয়ে সেটা জাস্টিফাই করা হচ্ছে আরকি।’
বড় বড় দুর্যোগ মানুষের মধ্যে সহমর্মিতা তৈরি করে কিন্তু এই দুর্যোগ সহমর্মিতার জায়গায় মানুষকে আরও স্বার্থপর করে তুলছে কিংবা করে তোলার সম্ভাবনা আছে বলেও মনে করেন তিনি।
নাট্যঅভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাসুম রেজা মনে করেন, করোনার কারণে ভবিষ্যতে নতুন নতুন কন্টেন্ট আসবে। তিনি বলেন, ‘করোনা পরবর্তীতে বিষয়বস্তুতে অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। এই বিষয়ে অনেক লেখালেখি হবে, এগুলো নিয়ে অনেকে মজাও করতে চাইবেন। আবার কেউ কেউ হয়তো সিরিয়াস কিছুও লিখবেন। যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে অনেক ভালো উপন্যাস আছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভালো খারাপ সব মিলিয়ে অনেক কিছু আছে। সেদিক দিয়ে মনে করি কন্টেন্টের দিক একধরনের সংযুক্তি হবে। এই বিষয়ক নানা ধরনের কন্টেন্ট আসবে। দ্বিতীয়ত সাবধানতা বাড়বে এবং বেশ কিছুদিন সাবধানতাটি থাকবে। দর্শকরাও একটু সন্দিহান থাকবেন। দর্শকদের পরিস্থিতি বিচার-বিবেচনা করা এগুলো অনেক সময় ধরে চলবে। ফলে কিছুটা স্থবিরতা থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রকৃতির প্রতি যে অবিচার করছি, সেই অবিচারের কারণে প্রকৃতি যে প্রতিশোধ নেয় এবং ভোগায়, এটার মধ্যে দিয়ে একধরনের প্রমাণ হয়ে গেল। ফলে এই ব্যাপারে মানুষ আরও অনেক সচেতন হবে বলে মনে করি।’