হাকিকুল ইসলাম খোকন :
নিউইয়র্কে নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর ও হত্যা চেষ্টাকারীরা একজোট হয়ে তথাকথিত জাতীয় ঐক্য গড়ে সরকারের পতন ঘটাতে চায়। জনগণ এই দুর্নীতিবাজদের ভোট দিলে দিবে।

স্থানীয় সময় গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যোয় নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটান হিলটন হোটেলের গ্রান্ড বলরুমে ‘প্রবাসী নাগরিক সংবর্ধনা’ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে তিনি নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। সংবর্ধনা সমাবেশে শেখ হাসিনা আরো বলেন, যুক্তফ্রন্টের নামে দুর্নীতিবাজরা এক হয়েছে। তারা ক্ষমতায় এলে দেশের সম্পদ লুটে খাবে। আওয়ামী লীগ সততায় বিশ্বাস করে। ‘জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথে বাংলাদেশ পরিচালিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও খ্যাতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে।’ ‘বালাদেশ এখন উন্নয়ন আর শান্তির রোল মডেল।’ মানবিকতার প্রশ্নেও সারাবিশ্ব প্রশংসার সাথে বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করছে। এসব অর্জনে প্রবাসীদের অকুন্ঠ সমর্থনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা করতে চাই।
জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে যোগদানে নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে এই সমাবেশের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ।

সংগঠনের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারি ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে মঞ্চে আরো উপবিষ্ট ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম,
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীসহ নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, কানেকটিকাট, বস্টন, ওয়াশিংটন মেট্র, ভার্জিনিয়া, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, মিশিগান, লসএঞ্জেলেস, শিকাগোসহ বিভিন্ন স্টেট থেকে নেতা-কর্মীরা সমাবেশে যোগদেন। সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী উপস্থিত ছিলেন। নেতা-কর্মীরা শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত রাখেন পুরো হল। বিভিন্ন শ্লোগানের পাশাপাশি ’নো মোর সিদ্দিক’ শ্লোগানটি উচ্চারিত হয় বার বার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাত প্রায় সাড়ে ৮টায় সমাবেশস্থলে এসে উপস্থিত হলে উৎফুল্ল নেতা-কর্মীদের মুহুর্মুহ স্লোগানে তাকে বরণ করে নেন। তিনি তার দীর্ঘ্য বক্তব্যের শুরুতেই স্মরণ করেন ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাকান্ডে শাহাদতবরণকারী বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেসা মুজিব ও অন্যান্য শহীদদের, জাতীয় ৪ নেতাকে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের।
তিনি বলেন, জাতির জনক তার পুরো জীবন মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন। তিনি একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তিনি যুদ্ধ শেষের পরও সহযোগিদের সাহায্য নেননি। বাংলাদেশকে দাঁড় করিয়েছেন। বিশ্বের বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই কাজ সমাপ্ত করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ দিয়ে গেছেন। তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আমরা দুই বোন বাইরে ছিলাম বলে বেঁচে যাই। আর সবাইকে হারিয়েছিলাম। আমরা ৬ বছর দেশের বাইরে ছিলাম। ১৯৮১ সালে আমি বিদেশে থাকা আবস্থায় আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়। আমি মানুষের ভালবাসায় দেশে ফিরে আসি। স্বাধীনতা বিরোধিরা ক্ষমতায় এসেছিলো। মন্ত্রী হয়েছিলো।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার সময়সহ সব সময় প্রবাসী বাংলাদেশীরা সহযোগিতা করে আসছে। আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রয়েছে প্রবাসীদের। ২০০৭ সালে আমাকে দেশে যেতে বাধা দেয় তৎকালীন তত্ত¦াবধায়ক সরকার। কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপ ও বাংলাদেশের মানুষের আন্দোলনের কারণে আমাকে দেশে যেতে দেয়া হয়। তখন আপনারা প্রবাসীরা জীবনের ঝুকি নিয়ে আমার সফরসঙ্গী হয়েছিলেন। সে জন্য ধন্যবাদ। প্রবাসীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানের নতুন সংযোজন ড্রিম লাইনার দিয়ে আপনাদের সুবিধার্থে অচিরেই ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু করা হবে।

সংবর্ধনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তার জন্য। এই আইনের জন্য সাংবাদিকদের উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। সাংবাদিকরা শুধু সাংবাদিকদের স্বার্থ দেখলে হবে না। সামাজিক সমস্যা দূর করতেই এই আইন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই আলোকচিত্রী শহিদুল আলম শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উসকানি দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি। এই কয়েক বছরে যে উন্নতি হয়েছে তা স্মরণীয়। আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তিনি বঙ্গবন্ধুর নীতির কথা স্মরণ করে বলেন, আমাদের নীতি হচ্ছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়। বিশ্বের সকল দেশের সাথে সফল কূটনৈতিক সম্পর্কসৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও যুব সমাজকে এন্টারপ্রেনিউর হিসেবে আত্মপ্রকাশ আজ বাংলাদেশকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।

তিনি সরকারের নানামুখি উন্নয়নের কর্মকান্ড তুলে ধরে বলেন, তার তিন টার্ম শাসন কালে গণতান্ত্রিক সুশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, অর্থনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিস্ময়কর উন্নতি বাংলাদেশকে আজ একটি নি¤œমধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরীত করেছে। যা আগামী ২০২১ এ মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ এ উন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হবে বলে বিশ্বসূচকে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনার দেশের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন বিশ্বে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করবো।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল হচ্ছে। আমরা কৃষকদের ভর্তুকি দিচ্ছি, ৮০ ভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ দিচ্ছি, মানুষের মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন রান্না চলে বিদ্যুতে, রিক্সা চলে ব্যাটারিতে। বাংলাদেশে খাদ্যের অভাব নেই, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, সবাই শান্তিতে আছেন। এখন আমাদের সমস্য হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের উন্নয়নে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না। বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থে আওয়ামীলীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ যাবে। তিনি আরো বলেন, এ সব উন্নয়নের কথা বলে ভোট বাড়াতে হবে, ইমেজ বাড়াতে হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা এলে দেশের উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি এলে দুর্নীতি হয়, স্বজনপ্রীতি হয়। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেকের দুর্নীতির কথা আমেরিকায় প্রমাণ হয়েছে। তার শাস্তি হয়েছে। খালেদা জিয়া এতিমদের অর্থ মেরেছেন। এতিমদের টাকা আত্মসাতের কারণে খালেদা জিয়া দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন। আর তাঁর বড় ছেলে তারেক জিয়াও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত।
তিনি বলেন, আমরা দেশের উন্নতি করি, আর বিএনপি আগুন সন্ত্রাস করে মানুষ পুড়িয়েছে, প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। মানুষ শান্তিতে থাকলে বিএনপি অশান্তিতে থাকে।

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমান দুর্নীতিতে দোষী সাব্যস্ত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তফ্রন্টের ড. কামাল হোসেন ও বদরুদ্দোজা চৌধুরী দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন।
তিনি বলেন, ‘এই সমস্ত দুর্নীতিবাজকে নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যাঁরা কথা বলেন, তাঁরা লড়াই করবেন! কামাল হোসেন লড়াই করবেন? বি চৌধুরী লড়াই করবেন? মান্না লড়াই করবে?’
শেখ হাসিনা বলেন, মঈনুল হোসেনও তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। যিনি কাকরাইলের বাড়ির জমি দখল করেছেন, সে জায়গা নিয়ে মামলা আছে।
বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের সহানুভূতিতে অবৈধভাবে বাড়ি দখলের পর দোষী সাব্যস্ত হয়ে গুলশানের বাড়ি হারিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের সমালোচনা করে বলেন, নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পরও তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ ছাড়েন না। দরিদ্রদের উচ্চসুদে ঋণ দিয়ে তিনি বড়লোক হয়েছেন।

হিলারি ক্লিনটনের সহযোগিতায় ড. ইউনূস পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করেছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমাকে গ্রেপ্তারের পর ইউনূস ইয়াজউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ডাবল এ প্লাস মার্ক দিয়েছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরা আজ সব এক জায়গায়। কেউ সুদখোর, কেউ ঘুষখোর, কেউ মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত, কেউ খুনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কেন সরকারকে উৎখাত করবে? কারণটা কী? দেশের জন্য আমরা কী করি নাই? এমন কোনো খাত নেই, যেখানে উন্নয়ন করি নাই। আর এটা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই সম্ভব।’
তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের ইতিহাসের নির্মম ও বর্বর হত্যাকান্ড, ধর্ষন, বাড়ী-ঘরে অগ্নিসংযোগসহ দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। মিয়ানমার থেকে নির্যাতনে শিকার হয়ে রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে। আমরা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। ১৬ কোটি মানুষকে যদি খাওয়াতে পারি, ৯ লাখ মানুষকে খাওয়াতে পারবো না কেন? শরনার্থীকে আশ্রয় প্রদান, খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। তিনি বলেন, মায়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে, নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির জন্যই আমি এখানে এসেছি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে পাশে দাঁড়ানোয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ার লক্ষে জাতির পিতার জীবন ও আদর্শকে ধারণ করে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী জাতীয় নির্বাচনে পুনরায় আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সকল দ্বিধা-বিভক্তি ভুলে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, স্লোগান না দিয়ে দলের উন্নয়ন কর্মকান্ড মানুষের কাছে তুলে ধরুন, দলের জন্য কাজ করুন যাতে দল আবার ক্ষমতায় আসতে পারে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়তে চাই। আগামী ২০২১ এ মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ এ উন্নত দেশে পরিণত করতে চাই।
অন্যান্য বক্তরা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো জন্য, মানবতার পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়ার আহবান জানান।
ড. সিদ্দিকুর রহমান প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নের্তৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি সমাবেশে উপস্থিত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা সাইফুল আলম সিদ্দিকি, পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করেন ডা. টমাস দুলু রায়, পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন পন্ডিত শুভঙ্কর গাঙ্গুলী। সংবর্ধনা সভায় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন কন্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান। বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকাশনা বিতরণ করা হয় অনুষ্ঠানে।
এর আগে জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদিতে গতকাল দুপুরে লন্ডন থেকে নিউইয়র্কে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সোমবার সকালে বিশ্ব মাদক সমস্যা বিষয়ে বৈশ্বিক আহ্বান সংক্রান্ত একটি সভায় যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এতে উপস্থিত থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘ মহাসচিব। বিকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে নেলসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটে ভাষণ দিবেন তিনি। একই দিনে শরণার্থী বিষয়ক বৈশ্বিক কম্প্যাক্ট ও শিক্ষা বিষয়ক দুটি হাই-লেভেল ইভেন্টে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া দুপুরে ইউএস চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত একটি রাউন্ড টেবিল আলোচনায় তিনি অংশগ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী কাল ২৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক কার্যালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত সাইবার সিকিউরিটি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক একটি সভায় বক্তব্য রাখবেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের আয়োজনে অ্যাকশন ফর পিস কিপিং বিষয়ক সভায় অংশগ্রহণ করবেন। এতে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ক্রমাগত উন্নতির বিষয়গুলো তুলে ধরবেন।
এ ছাড়া তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পর্কিত একটি প্যানেলে যোগ দেবেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে ২৬শে সেপ্টেম্বর জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী সাধারণ পরিষদের জেনারেল ডিবেট অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় ভাষণ দেবেন। রোহিঙ্গা ইসস্যুতে গত বছরের উত্থাপিত পাঁচ দফা সুপারিশের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখবেন। এর আগে লিথুনিয়ার প্রেসিডেন্ট আয়োজিত ‘নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন’ বিষয়ক সাইড ইভেন্টে ভাষণ দেবেন।
২৮ সেপ্টেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী তার এই সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন। এর পাশাপাশি তিনি কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, জাতিসংঘ মহাসচিব, কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গা বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। প্রধানমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্ট আয়োজিত একটি রিসেপশন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশগগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
ছবি : নিহার সিদদিকী