সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, আলীকদম;
বান্দরবানের আলীকদমের মাতামুহুরি নদীর চরে একসময় বিস্তীর্ণ তামাক চাষ হলেও এখন সেই চিত্র বদলে যাচ্ছে। তামাকের পরিবর্তে বাদাম, আলু, মরিচসহ নানা ধরনের সবজি আবাদে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলেছেন দুই তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা—যারা বর্গা নেওয়া ১৩ বিঘা জমিতে রেড লেডি ও টপ লেডি জাতের পেঁপে চাষ করে এলাকায় আলোচনায় এসেছেন।
বিস্তীর্ণ বাগানের প্রতিটি গাছে গড়ে ৭০ থেকে ৮০টি করে পেঁপে ফলেছে। অনেক পেঁপের ওজন দেড় থেকে ২ কেজি পর্যন্ত। কাঁচা ও পাকা—দুই অবস্থাতেই পেঁপে বিক্রি করে ভালো আয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
তামাকের ভালো দাম না পাওয়ায় কৃষকরা এখন দ্রুত লাভজনক পেঁপে চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। রোগবালাই কম, উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম এবং লাভ দ্বিগুণ হওয়ায় এ অঞ্চলে বাণিজ্যিক পেঁপে চাষ দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
উদ্যোক্তা সৈয়দ আলম মনু বলেন, “চারা রোপণের ৩০-৪০ দিনের মধ্যে ফুল ও ফল ধরে। প্রায় ৯০ দিনের মাথায় ফল আহরণ শুরু করা যায়। প্রতি বিঘায় ৪০০ থেকে ৫০০ মণ পর্যন্ত পেঁপে পাওয়া সম্ভব। কাঁচা পেঁপে মণপ্রতি ৮০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হয়। খরচ কম, লাভও দ্বিগুণ।” তিনি আরও বলেন, এ বছর অন্যান্য সবজিতে তেমন লাভ না হলেও পেঁপে চাষ তাদের নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।
উদ্যোক্তা কাইসার উদ্দিন বাপ্পি জানান, “দুই বন্ধু মিলে ৫ হাজার ৫০০টি পেঁপে চারা রোপণ করেছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। একেকটি পেঁপের ওজন হবে ১ থেকে ২ কেজি। প্রতি বিঘায় ৫০০ মণ পর্যন্ত উৎপাদনের আশা করছি। তবে প্রয়োজনীয় সার ডিলারদের কাছ থেকে ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না—তারা তামাক চাষিদের কাছে বেশি দামে সার বিক্রি করেন।”
বাগানে কর্মরত শ্রমিকরা বলেন, প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা করে মজুরি পান। নিয়মিত কাজ থাকায় তাদের সংসার ভালো চলছে। আরও এমন বাগান হলে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে বলে তারা আশা করেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ মো. সোহেল রানা বলেন, “এ বছর আলীকদমে ১৩ হেক্টর জমিতে টপ লেডি, রেড লেডিসহ উন্নত জাতের পেঁপে আবাদ হচ্ছে। কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এক ফসলেই সবজি ও ফলের চাহিদা পূরণে সক্ষম হওয়ায় এসব জাতের পেঁপে চাষ বাড়ছে।”
