সিবিএন ডেস্ক

রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর গ্রামে সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে জুলাই বিপ্লবের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর স্বস্তি, সন্তোষ এবং নিরাপত্তাহীনতার মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে পরিবার, সহযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর মধ্যে।

সকালে মা মনোয়ারা বেগম প্রতিদিনের মতো মাটির ঘর আর উঠোন ঝাড়ু দিচ্ছিলেন। কিন্তু মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল একটাই চিন্তা—আজ রায় হবে। অন্যদিকে, আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন ও ভাইয়েরা কবরের পাশে বসে অপেক্ষা করছিলেন রায়ের সংবাদ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা হতেই পরিবারসহ পুরো গ্রামে স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়লেও উঠে আসে রায় কার্যকরের দাবিও।

আরও পড়ুন

মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার দাবিতে চকরিয়ায় বিক্ষোভ মিছিল

মা মনোয়ারা বেগম বলেন, “আমার সন্তান আর ফিরে আসবে না। কিন্তু হাসিনার ফাঁসির রায় আমাকে কিছুটা শান্তি দিয়েছে। শুনেছি ভারত পালিয়ে গেছে—সেখান থেকে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে। না হলে আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে না।”

শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, “শুধু আমার ছেলে নয়, দুই হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে তারা। রায় দ্রুত কার্যকর করে শহীদ পরিবারগুলোকে শান্তি দিতে হবে।”

এদিকে আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন রায়ের পর পরিবারগুলোর ওপর হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “রায়ের পর আওয়ামী লীগ আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। আমাদের নিরাপত্তা জরুরি।”

মামলার বাদী রমজান আলী বলেন, “রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আমরা সন্তুষ্ট না। শহীদ পরিবারগুলো এখন বেশি ঝুঁকিতে।”

আরও পড়নু

আলীকদমে স্থানীয় ম্রো নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় সভা

রায় ঘোষণার পরপরই আবু সাঈদের কবরের পাশে এলাকাবাসী মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ প্রকাশ করে। তবে সহযোদ্ধা মাসুম বিল্লাহ বলেন, “আওয়ামী লীগের দোসররা এখনো সক্রিয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে।”

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগরের বিভিন্ন এলাকাতেও আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ হয়। সেখানে রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, “হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। দেরি হলে সহযোদ্ধারা আবারও মাঠে নামতে বাধ্য হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডা. শওকত আলী বলেন, “এটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম রায়। কার্যকর না হলে দেশ আরও সংকটে পড়বে।”

তবে রায় প্রত্যাশিত হলেও আতঙ্ক কাটেনি শহীদ পরিবারগুলোর। তাদের অভিযোগ—পুরোনো প্রভাবশালী চক্র এবং আওয়ামী লীগের দোসররা এখনও সক্রিয়, যা তাদের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আহত ও শহীদ পরিবারগুলোর নিরাপত্তায় সরকারের জরুরি উদ্যোগের দাবি জানান সবাই।

আরও খবর পেতে যুক্ত থাকুন CoxsbazarNEWS এর সাথে।