সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, আলীকদম;

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় “পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সুপার ক্রপ চাষাবাদ জোরদারকরণ প্রকল্প”-এর আওতায় তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে আখ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮২ জন কৃষক ৮২ বিঘা জমিতে আখ চাষ করছেন।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ প্রকল্পের আওতায় ৬৫ জন কৃষককে ৬৫ বিঘা জমিতে আখ চাষে সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং ৬০টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ১২৮টি আখ চাষের প্লট তৈরি করা হয়। উন্নত জাতের আখের বীজ, সার, কীটনাশক বিতরণসহ কৃষকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।

চলতি মৌসুমে আখ চাষে বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা আনন্দিত। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় আরও অনেক কৃষক তামাক ছেড়ে আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাকের বিকল্প হিসেবে আখ চাষ অর্থনৈতিকভাবে টেকসই হতে পারে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে আলীকদম উপজেলায় ১২৪ জন কৃষক ১২৪ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আখ (যেমন বিএসআরআই আখ ৪২ ‘রংবিলাস’, আখ ৪১ ‘অমৃত’, আখ ৪৭, চায়না, সেনেগাল, ব্ল্যাক রুবি ও ভিএমসি ৮৬-৫৫০) চাষ করছেন। সাথী ফসল হিসেবে আলু, মুলা, গাজর, বাঁধাকপি, শাক, ফুলকপি ইত্যাদি চাষ করে তারা অতিরিক্ত আয় করছেন।

গবেষণা অনুযায়ী, প্রতি বিঘা আখ ও সাথী ফসল চাষে কৃষকের নীট লাভ ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়, যেখানে তামাক চাষে লাভ হয় মাত্র ৫০-৭০ হাজার টাকা।

চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের কৃষক আবুল হাসেম জানান, তিনি ১ বিঘা জমিতে আখ চাষে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ করে ৩-৪ লাখ টাকা আয় করবেন বলে আশা করছেন। নারী উদ্যোক্তা চাইংনু মার্মা জানান, তিনি নিজের জমিতে আখ চাষ করে ৭৫ হাজার টাকা খরচের বিপরীতে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা আয় করেছেন।

প্রকল্পের কনসালট্যান্ট কৃষিবিদ ক্যসাইন বলেন, “আখ একটি অর্থকরী ফসল। বর্তমানে পার্বত্য এলাকায় আখ চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকদের জীবনমান উন্নত হচ্ছে। স্থানীয় গুড় উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা জেলার চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, আলীকদমে তামাকের পরিবর্তে আখ চাষ বিস্তারে কৃষি বিভাগের অব্যাহত সহায়তা দিলে এ অঞ্চলের কৃষকরা আরও দ্রুত স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন।