মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
জাতীয় দাবাড়ু মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ কৃতি খেলোয়াড় হয়ে এম্বাসেডরের ভূমিকা পালন করছে। সারাদেশে কক্সবাজারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। জাতীয় পর্যায়ে কক্সবাজার জেলার পরিচিতি বাড়াচ্ছে। উৎসাহ উদ্দীপনার প্রতীক হয়ে জেলার ক্ষুদে দাবা খেলোয়াড়দের প্রেরণা জোগাচ্ছে। জেলাবাসী তাকে নিয়ে গর্ব করছে।
বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের আয়োজনে ৪৯তম জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে কৃতিত্ব অর্জন করা কক্সবাজারের কৃতি দাবাড়ু মোহাম্মদ শাকের উল্লাহকে সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ (ভা:) মামুনুর রশিদ একথা বলেন। এসোসিয়েশন অব চেজ প্লেয়ার্স বাংলাদেশ কক্সবাজার এর উদ্যোগে গত ৬ অক্টোবর কক্সবাজারের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম অডিটোরিয়ামে আন্তর্জাতিক দাবা টুর্নামেন্ট চলাকালীন বিরতির সময় মোহাম্মদ শাকের উল্লাহকে এই সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
প্রধান অতিথি বিচারক মামুনুর রশিদ আরো বলেন, কক্সবাজারের মহেশখালীর সন্তান জাতীয় পর্যায়ের দাবাড়ু মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ একজন প্রতিভাবান ও দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ী খেলোয়াড়। যার দাবা খেলায় রয়েছে খেলোয়াড়ীপনা স্বভাব, বিচক্ষণতা ও অভিজ্ঞতার নান্দনিক চাপ। যার ফলে দাবাড়ু মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ একসময় জাতীয় পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক দাবা অঙ্গনে পৌঁছাতে সক্ষম হবে বলে প্রধান অতিথি মামুনুর রশিদ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ কে সম্মাননা স্মারক হিসেবে ক্রেষ্ট প্রদান করেন প্রধান অতিথি কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা জজ মামনুর রশিদ। এই সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, হোয়ানক কলেজের অধ্যক্ষ সারোয়ার কামাল, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার দাবা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী এস.এম তারেক, এসিপিবি ভাইস প্রেসিডেন্ট আসাদুজ্জামান, চট্টগ্রাম দাবা খেলোয়াড় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিদে মাষ্টার আবদুল মালেক, যুগ্ম সম্পাদক নুরুল আমিন, কক্সবাজারের ক্রীড়া সংগঠক রেজাউল করিম, নুর মোহাম্মদ, মোহাম্মদ হামিদ, মাজাহারুল কবির, সিসিপিএ’র সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, এসিপিবি’র দপ্তর সম্পাদক আবু হামিদ প্রমুখ। প্রসঙ্গত, কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা জজ মামনুর রশিদ জাতীয় পর্যায়ের একজন দাবা খেলোয়াড় ছিলেন।
বাংলাদেশের দাবার ইতিহাসে কক্সবাজার জেলা হতে এই প্রথম মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ প্রথমবারের মতো জাতীয় দাবাড়ু হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। ৪৯তম জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে দাবাড়ু মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ দশম স্থান অধিকার করেন। দশম ও একাদশ স্থানের টাইব্রেকিংয়ে কক্সবাজারের মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ফিদে মাস্টার মোহাম্মদ জাভেদকে পরাজিত করে দশম স্থান লাভের গৌরব অর্জন করেন এবং ফিদে মাস্টার মোহাম্মদ জাভেদ একাদশ স্থান পান। দু’জনের মধ্যে র্যাপিড দাবা ১-১ পয়েন্ট ড্র হয় এবং ব্লিটজ্ দাবায় মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ ২-০ গেমে ফিদে মাস্টার মোহাম্মদ জাভেদকে পরাজিত করেন। এর আগে জাতীয় দাবা খেলোয়াড় বাছাইয়ে কক্সবাজারের মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ অষ্টম স্থান অধিকার করে চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন। এই জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রান্ড মাষ্টার নিয়াজ মোর্শেদ, আন্তর্জাতিক মাষ্টার ফাহাদ রহমান, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আন্তর্জাতিক মাস্টার মনন রেজা নীড়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফিদে মাস্টার সাকলাইন মোস্তফা সাজিদ, বাংলাদেশ আনসারের ফিদে মাস্টার তাহসিন তাজওয়ার জিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের ফিদে মাস্টার সুব্রত বিশ্বাস, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ফিদে মাস্টার খন্দকার আমিনুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক মাস্টার আবু সুফিয়ান শাকিল, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আন্তর্জাতিক মাস্টার মোঃ মিনহাজ উদ্দিন সহ দেশের শীর্ষ ১৪ জন দাবা খেলোয়াড় অংশ গ্রহন করেন।
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের বড়ছরা গ্রামের আলী হোসাইন ও ফাতেমা বেগমের পুত্র অদম্য আত্মবিশ্বাসী মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ জন্ম ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারী। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি চলতি বছর জাতীয় যুব দাবা চ্যাম্পিয়ানশীপে রানার্স আপ, ২০২৪ সালে ন্যাশনাল প্রিলিমিনারী দাবা টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ান, ২০২৩ সালে ২য় শেখ কামাল দাবা টুর্নামেন্টে ব্রোঞ্জ পদক, ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম যুব দাবা (অনুর্ধ-১৭) এ চ্যাম্পিয়ান, ২০২৩ সালে শেখ কামাল ন্যাশনাল যুব দাবা (অনুর্ধ-১৬) এ রানার্সআপ, একই সালে র্যাপিড রেটিং দাবা টুর্নামেন্টে ও ইন্টারন্যাশনাল র্যাপিড রেটিং দাবা টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ান হওয়া সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক, জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ে দাবা টুর্নামেন্টে কৃতিত্বের সাথে সফলতা অর্জন করেন।
