আবদুর রশিদ, নাইক্ষ্যংছড়ি;

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মুইয়ংপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন গর্জনছড়া খালের ওপর নির্মিত একমাত্র সেতুটি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। গত সপ্তাহের টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতে সেতুর উত্তর পার্শ্ব ভেঙে মূল কাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, আর দক্ষিণ পার্শ্ব খালের ভেতরে হেলে গিয়ে কাত হয়ে পড়েছে। ফলে সেতুটি এখন কার্যত অচল হয়ে গেছে।

এই সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে মুইয়ংপাড়া, রাবার বাগানপাড়া, বেলছড়ি, থুইলা অং পাড়াসহ অন্তত দশটি গ্রামের হাজারো মানুষের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় যেতে এই পথ ব্যবহার করে। কিন্তু সেতুটি কাত হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের জীবন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। স্থানীয় অভিভাবকরা সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন। বিকল্প পথ থাকলেও তা দীর্ঘ ও দুর্গম হওয়ায় ব্যবহার করাও কষ্টসাধ্য।

সেতুটি অচল হয়ে পড়ায় স্থানীয় কৃষকরাও বিপাকে পড়েছেন। ধান, চাল, ফলমূল ও শাকসবজি সময়মতো বাজারে নিতে না পারায় অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এক কৃষক আক্ষেপ করে বলেন, “আমরা এত কষ্ট করে ফসল ফলাই, কিন্তু বাজারে নিতে না পারায় সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেতুটা আমাদের প্রাণ ছিল।”

মুইয়ংপাড়ার বাসিন্দা মাস্টার মংচাচিং, ডা. চিং থোয়াই মার্মা ও মইয়ং কারবারী জানান, “এই সেতুটি ছাড়া আমাদের জীবনে স্বস্তি নেই। বর্ষায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।”

সেতুর ফলক অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হয়। এক যুগ না পেরোতেই এমন অবস্থায় পৌঁছানোয় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা সতর্ক করে বলেছেন, দ্রুত সংস্কার না হলে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “বাজেট এলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই সেতু মেরামতের কাজ শুরু করা হবে।” তবে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করে, বাজেট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা বিপজ্জনক হতে পারে। তাদের দাবি, অন্তত অস্থায়ী ব্যবস্থা নিয়ে বর্ষার স্রোতে সেতুটি পুরোপুরি ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা ঠেকাতে হবে। এজন্য তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।