আবদুর রশিদ, নাইক্ষ্যংছড়ি;
বান্দরবানের সীমান্ত এলাকায় এক মানবিক ও সাহসী উদ্যোগের মাধ্যমে কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)-এর নির্যাতনের শিকার ১৪৩টি বম পরিবার নিজ ভিটায় ফিরে এসেছে। মিজোরামে আশ্রয় নেওয়া এসব পরিবারকে ফেরানো এবং পুনর্বাসনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে বান্দরবান রিজিয়নের সেনাবাহিনী ও প্রশাসন।
গত কয়েক মাস ধরে কেএনএ-এর সন্ত্রাস ও দমন-পীড়নের কারণে বান্দরবানের বম জনগোষ্ঠীর একাংশ বাধ্য হয়ে নিজের জন্মভূমি ছেড়ে ভারতের মিজোরামে পালিয়ে যায়। নারীদের ওপর সহিংসতা, শিশুদের নিরাপত্তাহীনতা এবং বৃদ্ধদের কষ্ট মিলিয়ে জীবন ছিল দুর্বিষহ। কিন্তু মিজোরামে থেকেও তাদের ভাগ্যে ছিল অনিশ্চয়তা ও মানবেতর জীবনযাপন।
বান্দরবান রিজিয়নের সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা, মানবিক সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে মিজোরামে পালিয়ে থাকা বম পরিবারগুলোকে ধাপে ধাপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৪৩টি পরিবার নিজেদের গ্রামে ফিরে এসেছে। ফিরে আসার পর সেনাবাহিনী তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা ও সহায়তা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
সম্প্রতি এক আয়োজনে ১৪৩টি পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এছাড়া শিক্ষা উপকরণ ও খেলাধুলার সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে এবং জীবিকা নির্বাহে উপযোগী উপকরণ প্রদান করা হয়েছে। এসব পেয়ে পরিবারগুলো নতুন করে বাঁচার আশা পেয়েছে।
প্রত্যাবর্তনকারী সুয়াংলু পাড়া বাসিন্দা লালমুন বম বলেন, “আমরা কখনো ভাবিনি নিজের গ্রামে আবার নিরাপদে ঘুমাতে পারব। সেনাবাহিনী আমাদের সেই স্বপ্ন ফিরিয়ে দিয়েছে।” স্যারনপাড়া বাসিন্দা রাম নুয়াম বম বলেন, “আমার ছেলে খেলাধুলার সামগ্রী পেয়ে এতটাই আনন্দিত, যেন পুরো পৃথিবী তার হয়ে গেছে।”
বান্দরবান রিজিয়নের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, “এই সহায়তা কার্যক্রম চলমান থাকবে। আমরা সবসময় অসহায় মানুষের পাশে আছি এবং থাকব।”
কেএনএ-এর দমন-পীড়নের শিকার এসব বম পরিবার এখন একটি নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের সমন্বিত মানবিক উদ্যোগ শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমবেদনার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
