নাইক্ষ্যংছড়ির জামছড়ি বিওপিতে ১১ বিজিবির মানবিক উদ্যোগ

সীমান্তে সচেতনতামূলক সভা, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও সহায়তা কর্মসূচি

প্রকাশ: ১৭ জুলাই, ২০২৫ ০৭:৩৪ , আপডেট: ১৭ জুলাই, ২০২৫ ০৭:৩৭

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


মো. আবদুর রশিদ, নাইক্ষ্যংছড়ি;

সীমান্তে শুধু পাহারা নয়, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এরই অংশ হিসেবে নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়ন (১১ বিজিবি) জামছড়ি বিওপি এলাকায় আয়োজন করে দিনব্যাপী সচেতনতামূলক সভা, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদান কর্মসূচি।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রায় ২০০ জন অসহায়, দরিদ্র ও দুঃস্থ নারী-পুরুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ গ্রহণ করেন। পাশাপাশি সীমান্তে মাদক, চোরাচালান, মাইন বিস্ফোরণ এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় মাইন বিস্ফোরণে আহত ৬ জন ভুক্তভোগীকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়।

৭৬ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা ময়না খাতুন, যিনি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা গ্রহণ করেন, বলেন—“আমার ডায়াবেটিস আর চোখের সমস্যা বহুদিনের। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছিলাম না। আজ এখানে চিকিৎসা ও ওষুধ পেয়েছি—আল্লাহ বিজিবির মঙ্গল করুন।”

তরিকুল ইসলাম (২৬), যিনি মাইন বিস্ফোরণে পা হারিয়েছেন, বলেন- “যখন আহত হই, তখন পাশে কেউ ছিল না। আজ বিজিবির সহায়তা কিছুটা ভরসা দিয়েছে। এখনো কষ্ট হয়, কিন্তু মনে হলো- কেউ তো আছে পাশে।”

ছালেহা বেগম (৬৫), খাদ্য সহায়তা পাওয়া এক গৃহবধূ বলেন- “আমাদের এলাকায় তেমন কাজ নেই। আজকে যে চাল-ডাল-তেল পেয়েছি, তা দিয়ে অন্তত দুই সপ্তাহ চলবে। বিজিবির জন্য দোয়া করি।”

সচেতনতামূলক সভায় বক্তারা বলেন, সীমান্তে মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মিয়ানমার সীমান্তে স্থাপিত মাইন বিস্ফোরণের ঝুঁকি সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। অবৈধ অনুপ্রবেশ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।

সভায় স্থানীয়দের অংশগ্রহণে এক ঐক্যবদ্ধ অঙ্গীকার গৃহীত হয়—সবাই সম্মিলিতভাবে সীমান্তে অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে কাজ করবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস কে এম কফিল উদ্দিন কায়েস। সঙ্গে ছিলেন ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক, অন্যান্য কর্মকর্তা, বিজিবি সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী এবং সাধারণ জনগণ।

বক্তব্যে অধিনায়ক বলেন- “শুধু সীমান্ত পাহারা নয়, আমরা মানবিক দায়িত্বও পালন করি। সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি সদা প্রস্তুত রয়েছে। তবে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা ছাড়া সেটা সম্ভব নয়।”

১১ বিজিবির এই মানবিক কার্যক্রম সীমান্তবাসীর মনে নতুন আশার আলো জ্বেলেছে। সীমান্ত রক্ষা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা যে একে অপরের পরিপূরক-এ আয়োজন তা আরও একবার প্রমাণ করলো।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়ন (১১ বিজিবি) ভবিষ্যতেও এমন মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।