আবদুর রশিদ, নাইক্ষ্যংছড়ি;

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ সড়কে চলমান সংস্কারকাজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। কাজ শেষ হওয়ার একদিনের মধ্যেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং। সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচের আস্তর খসে পড়ে বেরিয়ে এসেছে নিচের কাঁচা মাটি। কোথাও কোথাও গর্ত ও ধসও দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুললেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়, ঠিকাদার পালিয়ে যান।

প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি বাইশারী বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আশপাশের গ্রামের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। সড়কের এমন বেহাল দশায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, এক মাস আগে সড়কটির সংস্কারকাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শুরু থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার এবং তড়িঘড়ি করে কাজ শেষ করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। স্থানীয়দের আশঙ্কা সত্যি হয়ে ধরা পড়ে—মাত্র একদিনের ব্যবধানে কার্পেটিং উঠে যেতে শুরু করে।

সাবেক ইউপি সদস্য আজিজুল হক বলেন, “ধুলাবালিমেশানো নিম্নমানের পাথর, বিটুমিন কম থাকা এবং যথাযথভাবে রোলার ব্যবহার না করায় এমনটা হয়েছে। এটি জনগণের সঙ্গে সরাসরি প্রতারণা।”

বাইশারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন, “এটি নিছক অনিয়ম নয়—রাষ্ট্রীয় অর্থের নির্লজ্জ অপচয়। অবিলম্বে তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলম কোম্পানি প্রতিদিন সড়কটি ব্যবহার করলেও বিষয়টি উপেক্ষা করছেন। জনসাধারণের টাকায় নির্মিত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির উদাসীনতা প্রশ্নবিদ্ধ।

এ বিষয়ে বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাখওয়াত হোসেন বলেন, “ঘটনার খবর পেয়েছি। প্রাথমিক তদন্তে অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং দ্রুত সড়কটি পুনঃসংস্কার করা হবে।”

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “এটি অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি।”

এলাকাবাসীর প্রশ্ন—জনগণের করের টাকায় নির্মিত এই সড়ক কি আবারও দায়সারাভাবে সংস্কার হবে, নাকি এবার টেকসই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে?