আবদুর রশিদ, নাইক্ষ্যংছড়ি;
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার অন্যতম প্রাচীন দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা ছৈয়দ হোসাইনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনেছেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ শিক্ষকরা। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে মাদ্রাসা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগগুলো তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা রফিকুল ইসলামের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিনিয়র শিক্ষক মাস্টার ছৈয়দুল বশর। তিনি জানান, দায়িত্বকালীন সময়ে ছৈয়দ হোসাইন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায়, পকেট কমিটি গঠন, নারী লিপ্সা, স্বৈরাচারী আচরণ এবং মাদ্রাসার সম্পদের অপব্যবহারের মাধ্যমে কোটি টাকার বেশি আত্মসাতসহ একাধিক গুরুতর অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এ লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মাদ্রাসার শিক্ষানুরাগী সদস্য অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ। তিনি বলেন, এই মাদ্রাসা একটি মর্যাদাপূর্ণ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কর্তৃত্ব ধরে রাখার চেষ্টা দুর্ভাগ্যজনক। সাবেক অধ্যক্ষের নানা অনিয়মের প্রতিবাদে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রতিরোধের ফলে তাকে অবশেষে পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, ছৈয়দ হোসাইনের কারণে একসময় মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে অভিভাবক, শিক্ষক ও দাতা সদস্যদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে মাওলানা রফিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মাদ্রাসায় পাঠদান শুরু হয়, প্রশাসনিক কাঠামো সচল হয় এবং শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ ফিরে আসে। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা দাবি করেন, মাদ্রাসায় যখন শৃঙ্খলা ও অগ্রগতি ফিরে এসেছে, তখনই অপসারিত অধ্যক্ষ ছৈয়দ হোসাইন মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পুনরায় পরিবেশ অস্থির করার অপচেষ্টায় নেমেছেন।
তারা আরও অভিযোগ করেন, ‘অগ্রযাত্রা’ নামে একটি অনলাইন পোর্টাল এবং বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছৈয়দ হোসাইন ও তার ঘনিষ্ঠ, রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি আবু তালেব সিকদার, বর্তমান অধ্যক্ষ ও কমিটির বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন। এসব কর্মকাণ্ড মাদ্রাসার পরিবেশকে অশান্ত করতে এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র শিক্ষক ছৈয়দুল বশর বলেন, সাবেক অধ্যক্ষ ক্ষমতাসীন দলের কিছু প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে দীর্ঘদিন দুর্নীতিতে জড়িয়ে ছিলেন। তিনি গণমাধ্যমকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছেন এবং মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের সম্মানহানির উদ্দেশ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসার দাতা সদস্য মাওলানা হেলাল উদ্দিন, অভিভাবক সদস্য মোবাশ্বের আহমদ, সদস্য মুহাম্মদ আবু নাসের ও মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। তাঁরা বর্তমান অধ্যক্ষের নেতৃত্বে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনের শেষাংশে সকল শিক্ষক একযোগে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান—সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে মাদ্রাসার পরিবেশ রক্ষা করা হোক।
