জাহেদুল ইসলাম, লোহাগাড়া;

৬১ হিজরির ১০ মহররম ফোরাত নদীর তীরে সংঘটিত হয়েছিল ইতিহাসের এক অমর ও হৃদয়বিদারক অধ্যায়—কারবালার ঘটনা। এটি ছিল না কোনো সাধারণ যুদ্ধ; বরং ছিল ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যকার চূড়ান্ত আদর্শিক সংঘর্ষ। শক্তির নয়, এটি ছিল আদর্শের লড়াই। যেখানে একপক্ষ বাইয়াতের নামে অন্যায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল, সেখানে অপরপক্ষ বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে বলেছিল, “জুলুমের সঙ্গে আপোষ নয়।”

সেই সময় হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ছিলেন মুসলিম উম্মাহর প্রকৃত প্রতিনিধি। তিনি ক্ষমতার লোভে নয়, বরং সত্য ও ন্যায়ের পতাকা উঁচু রাখতে জীবন উৎসর্গ করেন। ইয়াজিদ কেবল একজন ব্যক্তি ছিলেন না—তিনি ছিলেন স্বৈরাচার, দুর্নীতি ও ধর্মের অপব্যবহারের প্রতীক। তার বিরুদ্ধে ইমাম হোসাইনের প্রতিরোধ ছিল এক সাহসী অবস্থান।

কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর নেতৃত্বে মাত্র ৭২ জন সাথী নিয়ে এক ভয়াবহ অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ পরিবার-পরিজনের অনেকে। দিনের পর দিন পিপাসা, খাদ্য সংকট ও অবরোধের মুখে থেকেও তাঁরা মাথা নত করেননি। ইমাম হোসাইন (রা.) সেদিন বলেছিলেন, “আমি অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করতে পারি না।” তাঁর এই উচ্চারণই হয়ে উঠেছে ন্যায়ের প্রতীক।

কারবালার এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে একটি অনন্য উদাহরণ। আজকের সমাজে যখন অন্যায়, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস অনেকের হারিয়ে গেছে, তখন ইমাম হোসাইনের আত্মত্যাগ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সত্যের পথে একাকী হলেও অবিচল থাকতে হয়।

ইমাম হোসাইন (রা.)-এর মৃত্যু হয়নি, বরং তিনি অমর হয়ে আছেন ইতিহাসের শিরায় শিরায়। কারবালা কেবল অতীত নয়, এটি একটি চলমান চেতনার নাম। যুগে যুগে এটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ন্যায়ের পথে দৃঢ়তা প্রদর্শনের এক অমোঘ অনুপ্রেরণা।

কারবালা আজও একটি প্রশ্ন রেখে যায়—আপনি কোন পক্ষের? হোসাইনের, না ইয়াজিদের?