মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, নাইক্ষ্যংছড়ি:

ঈদুল আজহার পরবর্তী ছুটি এবং ঈদের চতুর্থ দিনেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে পাহাড়কন্যা পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটন কেন্দ্র। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঈদে এখানে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের আগমন ঘটেছে।

বিশেষ করে ঈদের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দিন পর্যটকদের ভিড়ে পুরো এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। কেউ পাহাড়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করছেন, কেউবা ঝুলন্ত ব্রিজে ছবি তুলছেন, আবার কেউ শীতল লেকে কায়াকিং বোটে ঘুরে বেড়িয়ে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাচ্ছেন। এই সব মুহূর্ত অনেকে স্মার্টফোনে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছেন।

পর্যটকদের নিরাপত্তায় সচেতন রয়েছে উপজেলা প্রশাসন। পর্যটনকেন্দ্রের প্রবেশ মুখে ব্যবসায়ী সুলতান আহমদ কালু বলেন, “উপজেলা প্রশাসনের আন্তরিকতায় স্থানগুলো আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এ কারণে এবার পর্যটকের চাপ তিন গুণ বেড়েছে।”

শুক্রবার (১৩ জুন) বিকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন পরিবার, শিক্ষার্থী ও সংগঠনের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশে সময় কাটাচ্ছেন।

ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক সাদিক হোসেন ও রুমানা দম্পতি জানান, “আমরা পরিবারের ১৫ জন মিলে কক্সবাজার ঘুরে এখানে এসেছি। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং প্রশাসনের নিরাপত্তা আমাদের মুগ্ধ করেছে।” ফেনী থেকে আগত জাফরুল ইসলাম বলেন, “এই প্রথম পাহাড়ি পরিবেশে এসেছি। আগে ভয় পেলেও পরে বুঝেছি – দেশকে জানতে হলে পাহাড়ে আসতেই হবে।”

কুমিল্লা থেকে আসা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, “আমরা প্রতি বছর কক্সবাজারে তিন দিনের ভ্রমণে আসি। এবার নাইক্ষ্যংছড়ির আতিথেয়তা দেখে আরও একদিন বাড়িয়েছি। তবে পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের অভাবে কিছুটা ভোগান্তি হয়েছে। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান, পর্যটকদের সুবিধার জন্য লেকের পাশে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হোক।”

লেক স্পটে দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. শাহিন জানান, “উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরীর আন্তরিক উদ্যোগে লেকে নতুন কায়াকিং বোট সংযোজনসহ নতুন ব্যবস্থাপনায় পর্যটকের আগ্রহ বেড়েছে।”

ব্যবসায়ী হান্নান বলেন, “এখানে সারা বছর পর্যটক থাকলেও ঈদের সময় ৫-৭ দিন বেশি ভিড় হয়। আমরা ন্যায্য মূল্যে পর্যটকদের সেবা দিই।”

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার ঈদের আনন্দে মানুষ বেশি ভ্রমণ করছেন। আমাদের স্পটগুলো কক্সবাজারের কাছাকাছি হওয়ায় পর্যটকের চাপ বেড়েছে। গত তিন দিনে প্রায় ৫ হাজারের বেশি পর্যটক এসেছেন।”
তিনি আরও জানান, “পর্যটকদের নিরাপত্তায় লেকে আনসার সদস্য ও সাদা পোশাকে প্রশাসনিক সদস্য মোতায়েন রয়েছে। আমি নিজে প্রতিদিন সকাল-বিকাল মনিটর করছি যেন কেউ হয়রানির শিকার না হন।”