আজিজুর রহমান রাজু, ঈদগাঁও:
কক্সবাজার জেলার ঈদগড়-ইসলামাবাদ সংযোগ সড়কের গজালিয়ায় ঈদগাঁও খালের ওপর নির্মিত প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার প্রস্থের সেতুটি চার বছর পর নির্মাণ শেষ হলেও এখনো অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কারণ, সেতুর দুই প্রান্তে এখনো কোনো সংযোগ সড়ক নির্মিত হয়নি।
এ কারণে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতুতে উঠতে হয় কিংবা খালের দেয়াল ঘেঁষে হাঁটতে হয়, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গজালিয়া তালিমুল কোরআন দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিপূর্ণভাবে মই বেয়ে সেতু পার হচ্ছেন। কেউবা এক হাতে বই ধরে অন্য হাতে দেয়ালের কিনার ধরে হাঁটছেন।
পূর্ব গজালিয়ার শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা বলেন,
“প্রতিদিন মই বেয়ে উঠতে হয়। এক হাতে বই, অন্য হাতে মই ধরতে হয়। একটু পা পিছলে গেলেই বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।”
ছাত্রী সুমাইয়া জান্নাত ও হুমাইরা ইয়াসমিন বলেন,
“বৃষ্টির সময় দেয়াল ভিজে পিচ্ছিল হয়ে যায়। তখন ভয় আরও বেড়ে যায়। কিন্তু যেতেই হয়, ক্লাস তো মিস করা যায় না। আমরা দ্রুত সংযোগ সড়ক চাই।”
মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আমির হোসেন বলেন,
“পূর্ব গজালিয়া থেকে অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত মাদ্রাসায় আসে। তাদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে সেতুর সংযোগ সড়কটি দ্রুত নির্মাণ হওয়া প্রয়োজন।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সংযোগ সড়ক নির্মাণে প্রায় ১৫০ মিটার বা ৮০ কড়া জমি প্রয়োজন, যা ব্যক্তিমালিকানাধীন। জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি। ফলে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি এখন অকার্যকর একটি কাঠামোয় পরিণত হয়েছে।
ইসলামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন,
“সেতুর সংযোগ সড়ক জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সকলকে সাথে নিয়ে জমি কিনে হলেও কাজটি সম্পন্ন করতে চাই। জনগণের কষ্ট আমরা বুঝি।”
৯নং ওয়ার্ডের সদস্য জুবায়েদ উল্লাহ জুয়েল জানান,
“জমির মালিকদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। তবে এখনো জমির মূল্য নির্ধারণ সম্ভব হয়নি। আমরা দ্রুত সমাধানের মাধ্যমে কাজ শুরু করার চেষ্টা করছি।”
উপজেলা প্রকৌশলী মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন,
“এলজিইডি সাধারণত গ্রামীণ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে পারে না। তবে জমির মালিকরা স্বেচ্ছায় জমি দিলে দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণ সম্ভব।”
এই সেতুটি চালু হলে ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের হিমছড়ি ঢালা, তিনমুখা ও সাততারা নামের ডাকাতপ্রবণ এলাকাগুলো এড়িয়ে বিকল্প ও নিরাপদ সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারত। এতে ঈদগড়, গজালিয়া ও ইসলামাবাদসহ অন্তত তিন উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষের যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত হতো।
সচেতন মহলের দাবি, সেতুটি যেন অকেজো অবস্থায় পড়ে না থাকে, সে বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে যেন উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যর্থতা পরিণত না হয়—এটাই এখন সর্বজনীন প্রত্যাশা।