কক্সবাজার সংবাদদাতা ;

গত কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে অন্তত ৫৩টি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে মাটির দেয়াল ধসে একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রাণ হারিয়েছেন এবং বজ্রপাতে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১১ জন। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪০০টিরও বেশি বসতি।

সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন ইউএনএইচসিআর কক্সবাজার সাব-অফিসের যোগাযোগ সহযোগী মোশারফ হোসেন।

তিনি বলেন, “মাত্র দুই দিনের টানা বর্ষণে ৩৩টি ক্যাম্পে ৫৩টি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে হাজারের বেশি আশ্রয়স্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক।”

দেয়াল ধসে প্রাণ হারানো রোহিঙ্গার পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। বজ্রাঘাতে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ইউএনএইচসিআর-এর অন্তবর্তীকালীন প্রতিনিধি জুলিয়েট মুরেকেইসনি জানান, খাড়া ঢাল, ঘনবসতি ও অস্থায়ী ঘরবাড়ির কারণে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ঝড়ো হাওয়ায় বাঁশ ও ত্রিপলের তৈরি ঘরগুলো আরও নড়বড়ে হয়ে গেছে।

তিনি জানান, “রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে সাহায্য করছেন। তবে ক্যাম্পগুলোতে পর্যাপ্ত আশ্রয়ের জায়গা নেই।”

জুলিয়েট আরও বলেন, “বর্ষার মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই ক্যাম্পে আশ্রয়ের সংকট ছিল। এখন রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় আরও বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিচ্ছেন। অনেকেই আত্মীয়ের বাড়িতে থাকছেন, যেখানে স্বাভাবিক জীবনযাপন করাও কঠিন।”

মে মাসের শেষ থেকে আগস্ট পর্যন্ত চলবে বর্ষা মৌসুম। এই সময় বন্যা, ভূমিধস ও অন্যান্য দুর্যোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তাই আগেভাগেই জরুরি সহায়তার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিভিন্ন মানবিক সহায়তাকারী সংস্থা। ত্রিপল, দড়ি, ঘুমানোর ম্যাট, পানিশোধক ট্যাবলেট, জেরিক্যানসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম মজুত রাখা হয়েছে। প্রশিক্ষিত রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকেরাও প্রস্তুত আছেন।

জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস বলেন, “অর্থসংকটের কারণে দুর্যোগ প্রস্তুতি কার্যক্রম বাস্তবায়নে আমরা বাধার মুখে পড়ছি। ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাংলাদেশি জনগোষ্ঠী একই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকেন। এ অবস্থায় প্রস্তুতি নেওয়া শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি জীবনরক্ষাকারী।”

তিনি জানান, ২০২৫ সালের জন্য মানবিক সহায়তায় ১৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে সহায়তা করতে ৯৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার চাওয়া হয়েছে। কিন্তু বছরের মাঝামাঝি এসে তহবিল সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ।

গোয়েন লুইস বলেন, “আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ চালাচ্ছি, কিন্তু রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের মানবিক দায়িত্ব। আমরা আন্তর্জাতিক দাতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন এই দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য আরও সহায়তা দেন।”