চট্টগ্রাম সংবাদদাতা ;

বিভিন্ন কারণে পর্যটকরা চাইলেও সবসময় সেন্টমার্টিনে যেতে পারেন না। বিশেষ করে বৈরী আবহাওয়ার সময় সেন্টমার্টিনে যাতায়াত একেবারেই বন্ধ থাকে। অধিকাংশ পর্যটক দীর্ঘ সমুদ্রপথ ও বিশাল ঢেউয়ের সঙ্গে অভ্যস্ত না হওয়ায় সেখানে যাওয়া অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কাছেই লাল কাঁকড়ার দ্বীপ খ্যাত সোনাদিয়া হতে পারে একটি চমৎকার বিকল্প।

মহেশখালী উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সোনাদিয়ায় এখনো ইট-পাথরের স্থাপনা গড়ে ওঠেনি। দ্বীপটির প্রকৃতি এখনো প্রায় অবিকৃত ও নির্জন। এখানে পূর্ব পাড়া ও পশ্চিম পাড়া নামে দুটি গ্রাম রয়েছে। এ দুটি গ্রামের নির্দিষ্ট কিছু এলাকা পর্যটকদের জন্য নির্ধারণ করে বাকি বিস্তীর্ণ এলাকা সামুদ্রিক প্রাণী ও পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

সোনাদিয়া ঘিরে রয়েছে একটি দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত, যা সঠিক পরিকল্পনায় কক্সবাজারের মতোই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে। কিছু মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করলে সোনাদিয়া হতে পারে নতুন একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য।

কেন সোনাদিয়া হতে পারে আদর্শ বিকল্প:

ঐতিহাসিক বসবাস: সোনাদিয়ায় দীর্ঘকাল ধরেই মানুষের বসবাস রয়েছে। দ্বীপটির নামকরণেও রয়েছে ইতিহাসের ছাপ।

শুটকি শিল্প কেন্দ্র: শুটকি প্রক্রিয়াকরণের কারণে এখানে নিয়মিত বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের যাতায়াত রয়েছে।

সরকারি পরিকল্পনা: সরকার ইতোমধ্যে সোনাদিয়াকে বেজাকে (BEZA) দিয়েছে আধুনিকায়নের জন্য। পর্যটন স্পষ্ট হলে এটি একটি জাতীয় সম্পদে রূপ নিতে পারে। যতদিন না উন্নয়ন শুরু হয়, ততদিন সাধারণ মানুষ প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগের সুযোগ পাবে।

পরিবেশগত ভারসাম্য: কক্সবাজারের মতোই সোনাদিয়ার সৈকতেও পরিবেশের পুনর্জীবন ঘটে। স্থায়ী দূষণের সম্ভাবনা কম।

সহজ যাতায়াত: কক্সবাজারের কাছাকাছি অবস্থানের কারণে মহেশখালী-সোনাদিয়া একসঙ্গে ঘোরা সম্ভব, ফলে মহেশখালীর সৌন্দর্যও পর্যটকদের কাছে পৌঁছে যাবে।

সুরক্ষা নিশ্চিত: পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি পেলে সোনাদিয়া বৈদেশিক আগ্রাসন বা লোলুপ দৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে।

ইকো-ট্যুরিজমের সম্ভাবনা: পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পিং, সাইক্লিং ট্রেইল, বোট রাইড ও নেচার ওয়াক চালু করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে পর্যটকদের আগ্রহ বাড়ানো যেতে পারে।

শিক্ষামূলক কার্যক্রম: কচ্ছপের প্রজনন কেন্দ্র, প্যারাবন, সামুদ্রিক প্রাণীর অভয়ারণ্য ইত্যাদি শিক্ষামূলক ট্যুরের আয়োজনের মাধ্যমে একটি শিক্ষাভিত্তিক পর্যটন গড়ে তোলা সম্ভব।

পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো: রিসোর্ট, গ্ল্যাম্পিং ও টেন্ট ক্যাম্পিং চালু করে সৌন্দর্য উপভোগের নিরাপদ ও সচেতন সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে।

নৌযান সার্ভিস: কক্সবাজার থেকে নিয়মিত নৌসেবা ও স্পিডবোট চালু করে যাতায়াত আরও সহজ করা যায়।

স্থানীয় সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা: শুটকি প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র, জেলে গ্রাম পরিদর্শন ও স্থানীয় খাবারের স্টল পর্যটকদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হবে।

অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম: কায়াকিং, স্কুবা ডাইভিং, স্নরকেলিং, প্যারাসেইলিং, বিচ ট্রেকিং ইত্যাদি চালু করে তরুণদের কাছে সোনাদিয়াকে জনপ্রিয় করা সম্ভব।

নিরাপত্তা ও সহায়তা কেন্দ্র: পর্যটকদের জন্য লাইফগার্ড, সহায়তা ও তথ্যকেন্দ্র চালু করে ভ্রমণ অভিজ্ঞতা উন্নত করা যেতে পারে।

অর্থনৈতিক সম্ভাবনা: পর্যটকদের আনাগোনা বাড়লে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান ও হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী পণ্যের বিক্রি বেড়ে যাবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙা করবে।

সঠিক পরিকল্পনা ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনায় সোনাদিয়া শুধু সেন্টমার্টিনের বিকল্প নয়, বরং দেশের অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।

শাহিনুল ইসলাম শিবলী
সহকারী শিক্ষক
লাল মোহাম্মদ সিকদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
মহেশখালী, কক্সবাজার