আজিজুর রহমান রাজু, ঈদগাঁও;
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের মধ্যম গজালিয়া এলাকায় এক মুসলিম নারীর সদ্যজাত সন্তানকে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি পরিবারের কাছে বিক্রির অভিযোগে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঈদগাঁও থানা পুলিশ।
ভুক্তভোগী মা তসলিমা আক্তার জানান, গত ১০ মে (শুক্রবার) রাত ৯টার দিকে তার প্রসব বেদনা উঠলে তিনি নিজ ঘরেই সন্তান প্রসব করেন। পরদিন ১১ মে বিকেলে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ভবেশ দত্ত, মৃত আবুল খায়েরের ছেলে গুরা মিয়া এবং আমির হোসেনের মেয়ে জুসনা আক্তার তাকে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলে এক হিন্দু পরিবারের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানেই তারা সদ্যোজাত সন্তানটি কৌশলে ঐ পরিবারের হাতে তুলে দেন।
তসলিমা বলেন, “আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা আমার সন্তানটা দিয়ে দেয়। পরে আমি জোর করে গিয়ে বাচ্চা নিয়ে আসি। কিন্তু এরপর তারা খালি স্ট্যাম্পে জোর করে আমার স্বাক্ষর নেয় এবং আমাকে হুমকি দেয়।”
ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ভুক্তভোগী তসলিমা আক্তার গজালিয়া এলাকার বাসিন্দা বেলাল উদ্দিনের স্ত্রী। এটি ছিল তার তৃতীয় কন্যাসন্তান। অভিযোগ রয়েছে, মেয়ে হওয়ায় তার স্বামী বেলাল উদ্দিন পিতৃত্ব অস্বীকার করে স্ত্রী ও নবজাতককে ফেলে পালিয়ে যান।
ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জুবায়েদ উল্লাহ জুয়েল জানান, “ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পরে পুলিশকে খবর দিলে অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।”
ইসলামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, “এটি অত্যন্ত মর্মাহত ও মানবতাবিরোধী ঘটনা। একজন অসহায় মায়ের সন্তান কৌশলে অন্য পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া গুরুতর অপরাধ। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, দ্রুত তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।”
স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি সর্দার অসিউর রহমান বলেন, “এটি লজ্জাজনক ও ভয়াবহ মানবতাবিরোধী কাজ। একজন মায়ের কোল থেকে সন্তান কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বিচার ও কঠোর পদক্ষেপ চাই।”
ঈদগাঁও থানার ওসি মো. মছিউর রহমান বলেন, “ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর ও দুঃখজনক। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।”
ঘটনার পর মধ্যম গজালিয়া এলাকায় আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা এটিকে শিশু পাচারের পরিকল্পিত অংশ হিসেবে দেখছেন। একটি অসহায় পরিবারকে কেন্দ্র করে এমন নিষ্ঠুর ঘটনা সাধারণ মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। প্রশাসনের কাছে সবার একটাই দাবি—বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।