ইমাম খাইর, সিবিএন:
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন-ভাতা ও স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি প্রণয়নের দাবিতে ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন কক্সবাজারের বিচার বিভাগীয় কর্মচারীরা।

সোমবার (৫ মে) জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন এই কর্মসূচি পালন করে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৯টায় কর্মবিরতি শুরু করে সংগঠনটি।

এ সময় বিভিন্ন আদালতে কর্মরত কর্মচারীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে ব্যানার নিয়ে উপস্থিত হন। কর্মবিরতির কারণে আদালত অঙ্গনে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বিভিন্ন আদালতে সেবা প্রার্থীদের।

কর্মবিরতিতে নিজেদের দাবি দাওয়া উপস্থাপন করে বক্তব্য রাখেন, অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ও জেলা সভাপতি বেদারুল আলম, সিনিয়র সহসভাপতি মো. শামীম, সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেন, মো: রুকন উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান নূরী, জেলা উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম, নুরুল কবির, শহীদুল্লাহ, কর্মচারী নেতা মাহমুদুল হাসান নোমান ও বাবুল বড়ুয়া।

তাদের যৌক্তিক দাবি ও আন্দোলনের সঙ্গে আইনজীবীগণ সংহতি প্রকাশ করেন।

সকাল ১১টায় তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচি শেষ করেন। পরে কর্মচারীরা নিজ নিজ আদালত ও ট্রাইব্যুনালে ফিরে যান।

উল্লেখ্য, বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন দীর্ঘদিন ধরে বিচার বিভাগের বিভিন্ন বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে তা নিরসনের দাবি তুলছেন। তাদের মতে, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হয়। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর শুধুমাত্র মাননীয় বিচারকগণের জন্য ৬টি গ্রেড রেখে পৃথক পে-স্কেলসহ নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা হলেও সহায়ক কর্মচারীগণকে উক্ত পে-স্কেলের আওতাভুক্ত করা হয়নি। বিচারকগণের সাথে আদালতের সহায়ক কর্মচারীগণ একই দপ্তরে কাজ করা সত্বেও জুডিসিয়াল সার্ভিস পে-স্কেলের আলোকে বিচারকগণের বেতন-ভাতাদি প্রদেয় হলেও সহায়ক কর্মচারীগণ জনপ্রশাসনের আলোকে বেতন-ভাতাদি পেয়ে থাকেন। বিচারকগণের জন্য বিচারিক ভাতা, চৌকি ভাতা, ডিসেম্বর মাসে দেওয়ানি আদালতের অবকাশকালীন (ডিসেম্বর মাস) দায়িত্ব ভাতাসহ ফৌজদারি আদালতে দায়িত্ব পালনের জন্য এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অবকাশ ভাতা প্রদানের বিধান থাকলেও বিচার সহায়ক কর্মচারীগণকে অনুরূপ কোনো ভাতা প্রদান করা হয়না।

এক কথায় বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর মাননীয় বিচারকগণের জন্য কিছু সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হলেও সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত করা হয়েছে সহায়ক কর্মচারীগণকে।

নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, দীর্ঘ ১৮ বছর বৈষম্যের জাতাকলে পিষ্ট হয়ে ২০২৪ এ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন অন্তবর্তীকালীন সরকারের বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিলো, তাতে করে এসোসিয়েশন আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় অন্তবর্তীকালীন সরকারের অভাবনীয় উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সরকার কর্তৃক গঠিত বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সাথে এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ সাক্ষাৎ করে দাবী উপস্থাপন করা হয়। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এসোসিয়েশনের পেশকৃত দাবী যৌক্তিক হিসেবে সহমত পোষণ করলেও অন্তবর্তীকালীন সরকারের নিকট প্রদানকৃত কমিশন কর্তৃক প্রতিবেদনের সুপারিশে অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মচারীগণকে বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারী হিসাবে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন-ভাতাদি প্রদানের বিষয়ে কোনো প্রস্তাব রাখা হয়নি। অধিকন্তু আদালতের কর্মচারীগণের পদোন্নতির সুযোগ যেখানে একবারেই সীমিত, সেখানে এই পদোন্নতির পথ রুদ্ধ করতে অধস্তন আদালতের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের জন্য বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণকে পদায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। এরূপ প্রস্তাবনায় অধস্তন আদালতের কর্মচারীগণের পদোন্নতির ক্ষেত্রকে আরো সংকোচিত করবে।

আরো উল্লেখ্য যে, সচিবালয়ে একজন অফিস সহায়ক চাকুরিতে যোগদান করে (যোগ্যতার ভিত্তিতে) উপ-সচিব (নন্ ক্যাডার) পদে পদোন্নতি পেতে পারেন; বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট হাইকোর্ট বিভাগে অফিস সহকারী পদে যোগদান করে পদোন্নতি পেয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পর্যন্ত হতে পারেন; পুলিশের কনস্টেবল পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে (যোগ্যতার ভিত্তিতে) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নন্ ক্যাডার) পর্যন্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মচারীগণের এরকম কোন সুযোগ-সুবিধা নেই। নির্দিষ্ট কিছু পদে পদোন্নতি থাকলেও তা সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা (১০ম গ্রেড) পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।
জেলা জজ আদালত ও অধস্তন আদালতসমূহ এবং বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতসমূহ (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮৯ এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসী ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসীর আদালতসমূহ (সহায়ক কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০০৮ প্রণীত হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও উক্ত বিধিমালাগুলো হালনাগাদ করা হয়নি। অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদ-পদবি ও বেতন গ্রেড হালনাগাদ হলেও অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মচারীগণের ভাগ্যের কোনো উন্নতি নেই। পদোন্নতির ধারা উন্মোচনসহ নতুন পদ সৃজন না হওয়ায় অধিকাংশ কর্মচারীগণের পদোন্নতির সুযোগ একেবারেই রুদ্ধ। অনেক কর্মচারী পদোন্নতি ছাড়াই আক্ষেপ ও হতাশা নিয়ে একই পদে ৩৮/৪০ বছর চাকুরী করেও পদোন্নতি বঞ্চিত থেকে অবসরে যাচ্ছেন, যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি অঙ্গের একটি বিচার বিভাগ, আর সেখানেই বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারীগণ সবচেয়ে বেশি অবহেলিত ও নিষ্পেষিত। এমন পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারীগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ার উপক্রম।