আব্দুস সালাম, টেকনাফ প্রতিনিধি;
মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের প্রভাব অব্যাহত থাকলেও রাখাইনের মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ার পর থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের বাণিজ্য কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সীমান্তের নৌপথে আরাকান আর্মির বাধার কারণে স্থলবন্দরে পণ্যবাহী ট্রলার আসা বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সর্বশেষ, দেড় মাস পর মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরের উদ্দেশ্যে আসা তিনটি পণ্যবাহী কার্গো গত বৃহস্পতিবার নাফ নদীর মোহনায় আরাকান আর্মি আটক করেছে। কার্গোগুলোর প্রতিটিতে ৫০ হাজার বস্তা মালামাল রয়েছে। তিন দিন পার হলেও রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত কার্গোগুলো মংডু কায়ুংখালী খালে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন জানান, কার্গোগুলো এখনও আরাকান আর্মির হেফাজতে রয়েছে। এ ঘটনার কারণে ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত। তিনি বলেন, “মিয়ানমারের সংঘাতের কারণে বাণিজ্যে এমনিতেই ভাটা চলছে। সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে।”
টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, “কার্গোগুলোতে প্রায় ৩০-৪০ কোটি টাকার মালামাল রয়েছে। এগুলো ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা চলছে। মিয়ানমারের পরিস্থিতি সীমান্ত বাণিজ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। সরকারের উচিত দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া।”
আরাকান আর্মি দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে বাণিজ্যে অংশীদারিত্ব দাবি করছে। সীমান্তের জলসীমা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তারা এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। এক ব্যবসায়ী জানান, “আরাকান আর্মি লেনদেনের শর্ত জুড়ে দিয়ে কার্গোগুলো আটকে রেখেছে। তাদের দাবি মেটালে পণ্য ছেড়ে দেবে।”
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, “আরাকান আর্মি সীমান্ত বাণিজ্যে ভাগ বসানোর চেষ্টা করছে। এটি সমাধানে দুই দেশের সংশ্লিষ্টদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অন্যথায় সীমান্ত বাণিজ্যে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে।”
টেকনাফ স্থলবন্দরের জেটিঘাটগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। সেখানে শ্রমিকদের কোনও কাজ নেই। কাঠের ট্রলার খালাস করা ছাড়া বড় কোনো কার্যক্রম নেই। মাঝি আবু সুফিয়ান বলেন, “আমাদের ট্রলার থামানো হয়নি কারণ মালিকদের সঙ্গে আরাকান আর্মির বোঝাপড়া ছিল। কিন্তু পণ্যবাহী কার্গোগুলো আটকানো হয়েছে।”
টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, “মিয়ানমার জলসীমায় কার্গোগুলো আটকানো হয়েছে। এটি আমাদের জলসীমার বাইরে। তবে আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।”
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা এ সমস্যার দ্রুত সমাধানে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অন্যথায় সীমান্ত বাণিজ্য আরও বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।