চকরিয়া–পেকুয়ার রাজনীতিতে নতুন উচ্ছ্বাস—তৃণমূলে জাগরণ
পেকুয়া প্রতিনিধি :
প্রায় ১৪ বছর পর নিজ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় ফিরছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী এবং কক্সবাজার–১ (চকরিয়া–পেকুয়া) আসনের তিনবারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তার এ সফরকে কেন্দ্র করে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ, যা স্থানীয় বিএনপি এবং সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মামলাজট ও দেশের বাইরে অবস্থানসহ নানা কারণে সালাহউদ্দিন দীর্ঘ সময় ধরে এলাকায় সরাসরি গণসংযোগে অংশ নিতে পারেননি। মনোনয়ন পাওয়ার পর এটিই তার প্রথম বৃহৎ পরিসরের প্রত্যাবর্তন, ফলে এই সফরকে ঘিরে চকরিয়া–পেকুয়ার রাজনৈতিক অঙ্গন কার্যত উষ্ণ হয়ে উঠেছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২ ডিসেম্বর সকাল ১০ টায় তিনি ঢাকা থেকে বিমানযোগে কক্সবাজার পৌঁছাবেন। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চকরিয়ায় রওনা হয়ে প্রথমদিনই খুটাখালী ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নে দিনব্যাপী গণসংযোগ করবেন।
সেদিন সন্ধ্যা ৬ টায় ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একটি বৃহৎ পথসভায় বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে তার। স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, এই পথসভাকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরেই এলাকায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি—ব্যানার, ফেস্টুন, স্বাগত তোরণ ও মাইকিংয়ে পুরো ইউনিয়ন উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে।
পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম. বাহাদুর শাহ বলেন, “২ থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, গ্রাম ও অলিতে-গলিতে মানুষের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করবেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তৃণমূলকে পুনর্গঠনের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সফর।”
বহু বছর পর কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাকে কাছে পাওয়ায় চকরিয়া–পেকুয়ার বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোছাইন বলেন, “প্রায় ১৪ বছর পর নিজের গ্রামে ফিরে মানুষের সঙ্গে সরাসরি গণসংযোগ করবেন তিনি। এটি একটি আবেগের মুহূর্ত। প্রতিটি ওয়ার্ডে তাকে স্বাগত জানাতে আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি।”
উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কয়েক দফা বৈঠক করে গণসংযোগের রুট, সভাস্থল, নিরাপত্তা ও জনসমাগমসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সালাহউদ্দিন আহমদ অতীতে এলাকায় সড়ক–যোগাযোগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতির পর তিনি মাঠে ফিরছেন—এটি স্থানীয়দের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
পেকুয়ার স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “তিনি এলাকায় উন্নয়নের কাজ করেছেন। এবার দীর্ঘদিন পর ফিরে সরাসরি মানুষের কথা শুনবেন—আমরা আশা করছি তিনি আবার সক্রিয় হবেন।”
তরুণ ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ আরও বেশি। অনেকেই মনে করেন, তার সফর এলাকায় বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডকে নতুন গতি দেবে।
কক্সবাজার–১ আসন দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে অন্যতম আলোচিত এলাকা। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এখানে পরপর পরাজিত হয়েছে । তবে এবার সালাহউদ্দিনের ফেরাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ভোটব্যাংক পুনরুজ্জীবিত হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
তারা বলছেন, দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর স্থানীয় নেতা–কর্মীদের সংগঠিত করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে, তৃণমূলে তার ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা এখনো যথেষ্ট রয়েছে, সরাসরি মাঠে নামলে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা আরও হাড্ডাহাড্ডি হতে পারে।
তার প্রেস সচিব মো. ছফওয়ানুল করিম জানান,
“এটি সম্পূর্ণ নির্বাচনকেন্দ্রিক সফর। তিনি এক সপ্তাহ এলাকায় থেকে মানুষের সমস্যা, উন্নয়নের সম্ভাবনা এবং সংগঠন পুনর্গঠনের বিষয়ে মতবিনিময় করবেন।”
স্থানীয় সূত্র বলছে, পেকুয়ার উপকূলীয় এলাকায় লবণচাষীদের বিভিন্ন সমস্যা, নদীভাঙন, সড়ক–যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও মৎস্য–সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এসব ইস্যুতে সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ও প্রত্যাশা রয়েছে। সফরকালে এ বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা হবে।
