স্টাফ রিপোর্টার, পেকুয়া :
পেকুয়ার রাজাখালীর লবণচাষিদের সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি করে রাখায় দুশতাধিক প্রান্তিক চাষি নিঃশেষ হয়ে পথে বসেছে। এ সিন্ডিকেট লবণ চাষীদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
জানা যায়, রাজাখালী এরশাদ আলী ওয়াক্ফ এস্টেটের প্রায় ৬শ কানি জমির মতোয়াল্লী বিরোধের জের ধরে উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় ২০২৩/২৪ মৌসুমের পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত মতোয়াল্লী নিযুক্ত হন।
কানি প্রতি ২৫ হাজার টাকা খাজনা ধার্য করে সাবেক এমপি জাফরের নিয়ন্ত্রিত একটি সিন্ডিকেট গঠন করে লবণ মাঠ গুলো প্রান্তিক চাষীদের কাছে কানি প্রতি ৫/৫০ হাজার টাকায় লাগিয়ত করে কয়েক কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করে নেন ওই সিন্ডিকেট ।
সাবেক এমপি জাফর সহ সিন্ডিকেটটি শুধু লাগিয়ত বাবদ ১কোটি ২০ লাখ টাকা, পরিমাপের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি লবণ নিয়ে ১ কোটি ২৬ লাখের মতো কৃষকদের কাছ থেকে লুটপাট করেছে।
প্রান্তিক চাষীদের অভিযোগ রাজাখালীর সাবেক চেয়ারম্যান ছৈয়দনুর, আলা মিয়ার ছেলে জহির, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ছৈয়দনুরের ভাইজি জামাতা ইয়াবা কারবারি আনছারুল হক টিপু সহ একটি সশস্ত্র সিন্ডিকেট চাষীদের জিম্মি করে ইচ্ছেমতো খাজনা আদায় করে আসছে।
লবণ চাষীদের উৎপাদিত লবণ ওই সিন্ডিকেট নিজেদের মতো করে লুট নিয়ে গেছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ।
কেউ আপত্তি করলে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি জাফরের দাপট কাটিয়ে জিম্মি করে ৫০ হাজার টাকা কানি প্রতি খাজনা আদায় করছে বলে জানান চাষীরা। লবণের ন্যায্য মূল্য দেয়নি, পরিমাপের সময় পার্শ্ববর্তী চাষাবাদের বাজার মূল্য ও সঠিক ওজন না দিয়ে দালাল সিন্ডিকেট ইচ্ছে মত মূল্য নির্ধারণ করে মণ প্রতি ১০০ টাকা কমে জোরপূর্বক চাষীদের কাছ থেকে লবণ লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়া লবণ বিক্রির টাকা চাষীদের পরিশোধ না করায় দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। লবণের টাকা চাইতে গেলো মারধর ও মিথ্যা মামলার হুমকি দেয়।
মৌসুমের শেষদিকে শতাধিক চাষি লবণ মওজুদ করলে বর্তমানে ওই লবণ গুলো নিয়ে যেতে ওই দালাল সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে চাষীদের হুমকি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে চাষীরা পেকুয়া থানায় দালাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে থানার অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল মোস্তফা দুপক্ষকে নিয়ে বসে একটি মীমাংসায় সিদ্ধান্ত দিলে ওই দালাল সিন্ডিকেট তাও না মেলে কৃষকদের প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে বলে কৃষকরা অভিযোগ করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরজমিনে তদন্তেও এসব লুটপাট ও কৃষকদের জিম্মি করে লবণ বিক্রিতে ইচ্ছে মত দাম নির্ধারণ করে কৃষকদের লবণ কৃষকদের বিক্রি করতে না দেওয়ার মতো জঘন্য ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলেও জানা যায়, পার্শ্ববর্তী গিয়াসউদ্দিন চৌধুরীর এস্টেট মণ প্রতি ওজন ৪৬ কেজি ও চলমান বাজার ধর কৃষকদের দেয়া হলেও এরশাদ আলী ওয়াক্ফ এস্টেট কৃষকদের কাছ থেকে দালাল সিন্ডিকেট ৫২/৫৩ কেজি মন ওজন হিসেবে লবণ নিয়ে গেছে। বাজার ধরের থেকে মণপ্রতি একশ টাকা কম দিয়েছেন।
লবণ চাষি ফোরকান, হালিম সহ দুশতাধিক প্রান্তিক চাষি বলেন, আওয়ামী লীগ চলে গেলেও তাদের দোসররা সক্রিয়, কষ্টার্জিত লবণ তারা দালাল সিন্ডিকেটের কারণে ভোগ করতে পারছেনা। আমরা তাদের কাছে লাগিয়ত ও শ্রমের মজুরি চেয়েছি তাও দিচ্ছেনা। এ দালালদের কারণে আজ প্রত্যেক চাষীরা ঋণের ভারে জর্জরিত। এ ব্যাপারে দালাল জহিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন প্রচারিত খাজনার বেশি পরিশোধ করে লবণ মাঠ নেয়া হয়েছে এবং প্রতি বছর যে নিয়মে ওজন ধর দেয়া হতো সে নিয়মে ব্যবসা করছি।
পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল মোস্তফা বলেন, সবার পরামর্শ ও সহযোগিতায় বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
