দেলওয়ার হোসাইন, পেকুয়া প্রতিনিধি ;
নদী মাতৃক বাংলাদেশে অধিকাংশ নদী প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। নদী দখল দূষণ রোধে ছাত্র জনতাকে এগিয়ে আসতে হবে। দখল হওয়া নদী উদ্ধারে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান পরিবেশবাদীরা।
বিশ্ব নদী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক নাগরিক সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) ও আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ পেকুয়া উপজেলা শাখার আয়োজনে আয়োজিত নৌ র্যালি মানববন্ধন ও প্রতীকী পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পালন কালে এসব দাবি তুলে ধরেন পরিবেশবাদীরা।
রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর ) সকাল ১০ টায় কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার ভোলা খালের তীরে আয়োজিত নৌ র্যালি, মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক বাহাদুর চৌধুরী।
এতে বিশ্ব নদী দিবসের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ধরা’র পেকুয়া উপজেলা সমন্বয়ক দেলওয়ার হোসাইন, বক্তব্য রাখেন, ইয়ুথ অ্যাকশান বাংলাদেশ চট্টগ্রাম এর চেয়ারম্যান সাংবাদিক মুসলিম আজাদ, পেকুয়া উপজেলা মেরিন ফিশারিজ অফিসার মো. অলিউর রহমান,পরিবেশ কর্মী জালাল উদ্দীন, উপকূলীয় মুক্ত রোভার স্কাউটস গ্রুপের টিম লিডার ছাদেকুর রহমান,ছাত্র সমন্বয়ক প্রতিনিধি জিহাদুল ইসলাম জিহাদ,স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি মিজবাহ উদ্দিন, স্কাউটস প্রতিনিধি মোহাম্মদ রাজিব, আবদুল করিম, রায়হান জান্নাত তোহা, সাইমা কোবরাতুল জান্নাত তানিয়া প্রমুখ।
এসময় ইয়ুথ অ্যাকশান চট্টগ্রাম এর চেয়ারম্যান মুসলিম আজাদ বলেন, ভূমি দস্যু ও দখলবাজদের কবল থেকে জাতীয় সম্পদ নদীকে রক্ষা করতে হবে।মুক্ত রাখতে হবে ময়লা আবর্জনা ও বিষাক্ত কেমিক্যাল থেকে, নদী একটি জীবন্ত সত্তা, এই সত্তার অস্তিত্ব বিলীনের পথে, দখল হওয়া দেশের নদী উদ্ধার এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাই।
ছাত্র সমন্বয়ক প্রতিনিধি জিহাদুউল ইসলাম জিহাদ বলেন,আমরা ছোট থেকে বইয়ে পড়ে আসতেছি বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। মা’কে যেমন ভালোবাসি তদ্রূপ নদীকেও তেমনি ভাবে ভালোবাসতে হবে। মানব সংস্কৃতি ও উন্মেষ এবং ক্রমবিকাশের সঙ্গে নদী প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন ও বৃহত্তর সভ্যতাগুলো গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করেই। বাংলাদেশের বুক চিরে ছোট বড় প্রায় ৭০০-র মতো নদ-নদী বয়ে গেছে। একসময় নদীই ছিল যোগাযোগের প্রধান পথ। কৃষিকাজের সেচের একটি প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে আসছে বহুকাল থেকেই। বাংলাদেশের এত উর্বর মাটি সৃষ্টির পেছনে প্রধান কারিগর হিসেবে পলিমাটির জোগান দিয়েছে এই নদীগুলোই। ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রা উচ্চ রাখতে ভূমিকা রেখেছে নদীগুলো—যা গৃহস্থালি, খাবার, কৃষিকাজ ও শিল্প কারখানার কাজসহ অন্যান্য কাজের প্রধান সহায়ক। সামুদ্রিক অনেক মাছ প্রজননের সময় নদীতে এসেই ডিম পাড়ে বংশ রক্ষার জন্য।
আমাদের এত গুরুত্বপূর্ণ নদী আজ অবহেলা ও ভোগদখলে প্রকৃতি থেকে হারাতে চলেছে। তার কারণ প্রকৃতি বিরূপ ভাবে ফেলছে। আমরা নদী ভরাট, কলকারখানার বর্জ্য, জাহাজের তেল, নগরের আবর্জনা ইত্যাদি নদীতে ফেলে নদীকে দূষিত করছি। ফলে অনাবৃষ্টি, তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে এক অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আবির্ভাব ঘটছে দ্রুত যা আগে এত কাছাকাছি সময়ে কখনো ঘটেনি।
আমাদের এতো গুরুত্বপূর্ণ নদী যারা অবহেলা করছে এবং ভোগদখল করছে তাদের বিরুদ্ধে পেকুয়ার ছাত্র-জনতা প্রতিবাদে সোচ্চার হবে।
সাংবাদিক জালাল উদ্দীন বলেন,সরকার পেকুয়া বাজার থেকে প্রতি বছরে আড়াই কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে কিন্তু বাজারের বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য কোন ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন করেনি ফলে বাজারের সব বর্জ্য কহলখালী খালে ফেলে খালটি মারাত্মক ভাবে দূষণ হচ্ছে। একদিকে দূষণ অন্যদিকে প্রভাবশালীদের দখল এই দুই এর কারণে বিলুপ্তির পথে কহলখালী খাল। দখল দূষণ থেকে মুক্ত করে খালটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন,নদী দখল ও পাহাড় নিধন করে পরিবেশ ও প্রাণ প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আগামীতে পেকুয়া বাজারের কোন ময়লা কহলখালী খালে ফেললেই দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এসময় উপকূলীয় মুক্ত রোভার স্কাউটস গ্রুপের রোভার ও স্কাউটস সদস্য, পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়,পেকুয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।