মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী, ঈদগাহ:

মাছুয়াখালী বালুমহালের নিলামকৃত বালু পরিবহনের মেয়াদ ৩১শে জুলাই ২০২৪-এ শেষ হলেও, ১২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তা ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে বলে কালিরছড়া এলাকায় ব্যাপক আলোচনা চলছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ২৩টি ড্রেজার মেশিন জানুয়ারি ২০২৪ থেকে একদিনও বন্ধ হয়নি। যদিও মেশিন বসানোর অনুমতি ছিল না। এই সময়ে বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলিত হয়েছে, যার বর্তমান মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা (ছবি সংযুক্ত)।

জানা গেছে, মাছুয়াখালী বালুমহালের নিলাম নেয় জনৈক কাইয়ুম উদ্দিন, যিনি ঈদগাহ উপজেলা কমিউনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক। নিলামের মেয়াদ শেষ হলেও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। নিলামের শর্ত অনুযায়ী মেশিন বসানোর অনুমতি না থাকলেও, তা অমান্য করা হয়েছে। গত বছর ইজারাকালীন সময়ে চেয়ারম্যান শাহ আলম সরকারি শর্ত ভঙ্গ করে বালু উত্তোলন করায়, প্রশাসন তা জব্দ করে এবং ১ কোটি ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি হয়।

কিন্তু গোপন চুক্তির মাধ্যমে মেয়াদ আবারও ৩১শে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। প্রাক্তন এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় কাইয়ুম উদ্দিনের নেতৃত্বে ১৫ বছর ধরে বালুমহালটি লুটপাট করা হয়েছে। জমির মালিকরা কমলের হুমকির কারণে প্রশাসনের কাছে যেতে পারেনি। বর্তমান সরকার পতনের পর জমির মালিকরা আশাবাদী হলেও, পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, কানছিরা ঘোনা থেকে খাদিক্ষুম এবং জইল্লারজুম পর্যন্ত প্রায় তিন বর্গকিলোমিটার এলাকা ৪০ থেকে ৮০ ফিট গভীর গর্ত করে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় দুই কোটি টাকার বালু জমা আছে।

মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা জানান, বৃষ্টির কারণে বালু বিক্রি সম্ভব না হওয়ায় মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে চৌহদ্দির বাইরে বালু উত্তোলনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি ১২ লক্ষ টাকার লেনদেনের অভিযোগটি মিথ্যা বলে দাবি করেন।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল জাহান চৌধুরী জানান, তিনি এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন, তবে রাজনৈতিক প্রভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি। বেশ কয়েকটি পাহাড় আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।

স্থানীয়দের মতে, ১৫ বছরে পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে তা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে বালু ও বনখেকোদের দমন করা সম্ভব হবে না।