আব্দুল মালেক:

হেডলাইন দেখে চমকে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। সেন্টমার্টিন বাজারে সত্যিই আগুন ধরেছে। আগুনটা লেগেছে নিত্য পণ্যের উপরে। ১০ টাকার লেবু ৪০ টাকা। আলু কেজিতে ৮০ টাকা, টমেটো ২০০ টাকা, ১০০ টাকার নিচে কোনো তরিতরকারি নেই।
বঙ্গোপসাগরের পাড়ের দ্বীপটিতে ৮০০ টাকা কেজির কমে কোনো মাছই নেই। বড় মাছ কেটে কেটে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১ হাজার আর ইলিশের দাম কেজিতে ১৪০০ টাকা। ফার্মের মুরগী ৩০০ ও ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১ কেজি ওজনের সাইজ তরমুজের দাম হাঁকছে ২৬০ টাকা। একটু সাইজে বড় হলে ৩০০ থেকে ৪০০। ১৫০ টাকার খেজুর ৪০০ টাকা।
এছাড়াও পিয়াজ, রসুন,আদা, চিনি, ডাল, লবণ, ছুলা, ডিম, মসলা, দুধসহ নিত্যপণ্যের দাম দ্বিগুণে বিক্রি করছে সেন্টমার্টিন বাজারে।

জ্বালানী তৈল ডিজেল ১৪০ ও পেট্রোল/অক্টেন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা প্রতি লিটারে।

দেশের অনান্য অঞ্চলের বাজারের চাইতে সম্পূর্ণ আলাদা সেন্টমার্টিন বাজার। যেখানে নিত্যপণ্যের দাম দ্বিগুণে বিক্রি হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা রমজান মাসকে তার্গেট করে থাকে। প্রয়োজনীয় মালামাল মজুত রেখে এবং তারা সুযোগসন্ধানী হয়ে মনোপলি বিজনেস করে ।

সেন্টমার্টিন বাজারে মুদির দোকানদার এনায়েত উল্লাহর কাছ থেকে নিত্য পণ্য ছড়া দামে বিক্রি করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সবকিছু টেকনাফ থেকে ক্রয় করে নিয়ে আসি। টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন ঘাটে হাসিল ও লেভাররা আমাদের উপর জুলুম করে। একটা বস্তা টেকনাফ থেকে দোকান পর্যন্ত পৌঁছতে চার জায়গায় টাকা দিতে হয়।

সেন্টমার্টিন বাজারের আরেক দোকানদার হামিদ হোসেন বলেন, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন ঘাটে হাসিল বা টুলের নামে চাঁদাবাজি করে আসছে যুগের পর যুগ ধরে আমাদের দ্বীপবাসীর উপর। বাড়িতে ঘুমানের জন্য একটা কাঠ কিনলাম ৩ হাজার দিয়ে। আর সেটি টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন আনতে খরচ গুনতে হয়েছে আমার আরো ৩ হাজার টাকা। এ যেন এক মগেরমুল্লুকের দেশে বসবাস করছি।

মাছ ব্যবসায়ী মঞ্জুর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, রমজান মাস চলছে। ইফতারের সময় ঠান্ডা পানিয় খাবার সবাই পছন্দ করেন। কয়েকদিন আগে আমার ফ্রিজটি নষ্ট হয়ে যায়। মেরামত করতে টেকনাফ নিয়ে যেতে দুই জায়গায় অনুমতি নিতে হয়েছে। এমনকি নিজের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু আনতে বা নিয়ে যেতে অনুমতি লাগে। যা দেশের অন্য কোথাও নেই। সব আইনকানুন আমাদের দ্বীপের মানুষের উপর।
দিনমজুর আলী আকবর বলেন, “বেক্কুনর দাম বেশি, সাম্মে বাইরা, এট্টিয়ার জিনিস দুটিয়া বেচের, আল্লাহ জানে এ বছর বাইরা কেন অন”
অর্থাৎ “সবকিছুর দাম বেশি। সামনে বর্ষা। এক টাকার জিনিস দুই টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আল্লাহ জানে এ বছর বর্ষায় কেমন হয়”।

টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন ট্রলার ঘাটে হাসিল বা টুল কমিয়ে সেন্টমার্টিন বাজারে নিত্য পণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য স্থানীয় প্রসাশন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করছেন দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা।