জালাল আহমদ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

রাজনীতি করতে হলে সাধারণ মানুষের মনের কথা বুঝতে হয়। জনগণের গণদাবি মেনে নিয়ে সরকার কে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।

আজ ৯ নভেম্বর (২০২৩) বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে “বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ কারাবন্দী সকল নেতাকর্মীদের মুক্তি, গণগ্রেফতার বন্ধ, এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি”তে আয়োজিত এক মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাদা দলের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডক্টর মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় আয়োজিত এই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সিনেট সদস্য এবং বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ডক্টর মামুন আহমেদ বলেন,”২৮ অক্টোবর যা সহিংসতা হয়েছে তা সরকার ও সরকারি দলের উস্কানিতে হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভূমিকা পালন করছে না। আমি সাদা দলের পক্ষ থেকে ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করছি”।

এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন,” দেশ এখন কেমন চলছে তা আমরা সবাই জানি। দেশে চরম ফ্যাসিস্ট সরকারের দু:শাসন চলছে। ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম একনায়কের শাসন চলছে। জাতি হাসিনা রেজিমের পতন চায়। গণতন্ত্রের দাবিতে বিরোধী মতের সবাই আন্দোলন করছে।

তিনি আরো বলেন, “২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে কারা হামলা চালিয়েছে তা দেখতে হলে সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া দেখলে চলবে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফলো করতে হবে।

বাংলাদেশে অতীতে লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার ইতিহাস শেখ হাসিনাই তৈরি করেছিলেন। শাহবাগে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে ১১ জন কে হত্যা করেছিলো।

ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছিলেন যে শাপলা চত্বরের পরিণতি ভোগ করতে হবে। এটা বলে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

বি.বাড়িয়া এবং লক্ষ্মীপুর উপনির্বাচনে একজন ব্যক্তি ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩ টি ভোট দিয়েছেন। তাই আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় তা স্পষ্ট।

বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য লড়াই করছে না। বিএনপি মানুষের ভোটাধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছে।

চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেন ,”কথা বললেই গুম হতে হয়। আমরাও কখন গুম হয়ে যায় জানি না।বিএনপির চল্লিশ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা।

বাগানে মশারী টাঙিয়ে ঘুমাচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবু আন্দোলন থেকে পিছপা হচ্ছেন না।

ঢাবি সাদা দলের সাবেক আহ্বায়ক এবং অমর একুশে হলের সাবেক প্রভোস্ট , বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডক্টর আখতার হোসেন খান বলেন,

“১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে আমাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল।

স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরের মাথায় একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে গণতন্ত্র কে কবর দেয়া হলো। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে ধীরে ধীরে আন্দোলনের মাধ্যমে ১৯৯০ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলো।

এদেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে। এটা এদেশের মানুষের ঐতিহ্য।

শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত এদেশের মানুষ লড়ে যাবে। আপনারা ভয়ানক পরিণতির জন্য অপেক্ষা করুন।

আমার টাকা দিয়ে কেনা গুলি আমার উপর দিয়ে চালাবেন না”।

সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো: লুৎফর রহমান বলেন, ” এই সরকার মানুষের সকল মূ্ল্যবোধ কে ধ্বংস করে ফেলেছে।বাংলাদেশের মানুষ বিগত কয়েক বছর ধরে ভোট প্রদান করতে পারছে না।২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি প্রহসনের পাতানো নির্বাচন হয়েছিল।২০১৪ সালের নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে নি। অধিকাংশ আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বাকি আসনগুলোতে জনগণ ভোট দিতে যায়নি। অধিকাংশ কেন্দ্র ছিল ফাঁকা।২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছিলেন। সরকার কথা দিয়েও সুষ্ঠু নির্বাচন দেয় নি।

তিনি আরো বলেন,”বিএনপি ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনমত সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল। বিএনপি’র প্রতিটি আন্দোলন ছিল অহিংস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একাডেমিক কাজে ব্যস্ত। তারপরও জাতির দুর্দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। জাতির এই ক্রান্তিকালে আমরা পাশে আছি।

তিনি আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন,”মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ কারাবন্দী মুক্তি দাবি করছি।জনগণের ভাষা বুঝতে না পারলে আপনাদের পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। জনগণের ভোটে একদিন এদেশে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে ‌।

জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে বিএনপির আন্দোলন করছে।