জে.জাহেদ:
কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর আদি নাম ছিল আদিনাথ-মহেশখালি। যে ঘাট নিয়ে নানা অনিয়মের ফিরিস্তি শোনা যাচ্ছে সেই ঘাটেরও পূর্ব নাম ছিল ‘গোরক্ষনাথের ঘাট’ কালের পরিক্রমায় বিবর্তনের ফলে তা রূপ নিল ‘গোরকঘাটা’ জেটিঘাটে। ব্রিটিশ অধিকার প্রতিষ্ঠার কিছু পরে ১৭৯৮ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে স্কটল্যান্ডের ডা. ফ্রান্সিস বুকানন-হ্যামিল্টন মহেশখালী ভ্রমণ করেন।
ফিরে গিয়ে তিনি লিখেছেন, মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণ অংশে বাঘের আনাগোনা দেখেছিলেন তিনি। আরও লিখেছেন মহেশখালির পাহাড়ে প্রচুর বন্য শূকর ও হাতির উপস্থিতির কথা। পরে যা বিলীন হয়ে গেছে নানা কারণে (সূত্র: ফান শেন্দেল ২০০৮: ৪৪)।
আর এখন যে, পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ ও প্রাণী বসবাস করে কেউ কেউ কি তা বিলীন করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে কিনা সেটি বুঝে উঠতে পারছি না। উন্নয়নের মহাযজ্ঞে মেগা প্রকল্প আর অর্থনৈতিক জোন কিংবা বিশ্ব বাণিজ্যিক মোড়লের কথা বলে বসতি উচ্ছেদ করে উন্নয়নের মহড়া এখন সেখানে। এসব দেখে মনে হয় মানুষ হয়ে আমরা মানুষকেই উচ্ছেদ করছি কিনা সংশ্লিষ্ট মহলের তা ভেবে দেখা দরকার। এ বিষয়ে সচেতন মহলে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক কারণে মহেশখালী দ্বীপ থেকে বন্যপ্রাণী অদৃশ্য হয়েছে যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এখন মনুষ্য কারণে আদি বসবাসের চিহ্নটুকু থাকবে কিনা সে বিষয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছে। মানুষ বসবাসে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান সমূহ যদি সম্পদ হয় তবে মহেশখালীকে মানচিত্রে তার নিজস্বরূপে টিকিয়ে রাখতে আমরা কি পরিবেশ ও বন রক্ষায় কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছি? না মহা উন্নয়নের নামে প্রকৃতিকেও খুন করার পাশাপাশি মহেশখালী নামক দেশের একমাত্র পাহাড়সমৃদ্ধ দ্বীপটিকেও হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছি..!
মহেশখালীর মোট আয়তন প্রায় ৪০০ বর্গকিলোমিটার। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ হাজার একর জমি কয়েকটি সরকারি সংস্থার অধীনে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কারণ সরকার মহেশখালীকে কেন্দ্র করে দীর্ঘমেয়াদি ও বড় বড় বিনিয়োগ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সরকারের এসব বিনিয়োগ পরিকল্পনায় রয়েছে একটি সমুদ্রবন্দর, ১৩ হাজার ৫৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র, ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, একটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল, জ্বালানি তেলের পাইপলাইন এবং পেট্রোলিয়াম কমপ্লেক্স স্থাপন করা।
এছাড়াও বেজার কার্যপত্র সূত্রে জানা যায়, মহেশখালীতে ১০ হাজার ৭২২ একর জমি বেজা, ২ হাজার ৬৬৮ একর কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, ৫ হাজার ৫৮০ একর জমি বিদ্যুৎ উন্নয়ন ক্ষেত্রের (পিডিবি), ১৯২ একর জমি ইস্টার্ন রিফাইনারির, ২৫৩ একর জমি গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির এবং ৫ একর জমি কোস্টগার্ডের মালিকানায় দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক মহেশখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আটটি কয়লাভিত্তিক ও একটি ৩ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র তিনটি নির্মাণের জন্য কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষরও সম্পন্ন হয়েছে।
প্রিয় পাঠক, এবার আমরা কি চিন্তা করছি? না শুধু উন্নয়নের জোয়ার দেখছি। সামনে আমাদের কি পরিণতি অপেক্ষা করছে? আর এসব বিষয় বুঝতে কি সবাইকে পরিবেশ বিজ্ঞানী হতে হবে? কোন টেলিভিশনের যান্ত্রিক সমস্যা বুঝতে যেমন কোন মানুষকে টেলিভিশন হতে হয় না তেমনি এতগুলো কয়লা আর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরিবেশের কি রকম বিরূপ প্রভাব পড়বে তা বুঝতে আশা করি কারো কষ্ট হওয়ার কথা নয়। সেই মান্ধাতার আমল হতে মহেশখালীতে নির্মল আলো-বাতাস, সাগর-পাহাড় ও প্রকৃতির সৌন্দর্য রূপ উপভোগ করে আসছে সাধারণ মানুষ। পর্যটকদের আনাগোনাও বেশ লক্ষণীয়। এখন প্রকৃতির এসব নৈসর্গিক ব্যবস্থাপনা বিনাশের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর আমরা সবাই উন্নয়ন দেখার অপেক্ষায় রয়েছি। দর্শক হয়ে গেলাম সকলে। কোনো একসময় বুঝা যাবে আসল ঘটনা, হয়ত তখন আর কিছুই করার থাকবে না।
শুধু যে মহেশখালী কিংবা বাংলাদেশের এ অবস্থা তা কিন্তু নয়। বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন ব্যবসার শ্লোগানের ফলাফল স্বরূপ ‘জলবায়ু পরিবর্তন’। এর বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। কারণ বিশ্ব আজ পুরোপরি রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। ব্যবসায়িদের প্রভাব বলয়ে প্রায় প্রতিটি দেশ। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ প্রতাপশালী রাষ্ট্র আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কয়েকদিন আগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে রিপোর্ট দিয়েছে আমাদের সংসদের ৬৩% এমপি ব্যবসায়ী। উন্নয়ন হচ্ছে দেশের। তবে ব্যবসায়ী এমপিদের চেয়ে বেশি নয়।
প্রকৃতপক্ষে, মহেশখালির তিনটি দ্বীপ সোনাদিয়া, মহেশখালি ও ধলঘাট-মাতারবাড়ী। এখানে মানুষের বসবাস। মহেশখালি নামক দ্বীপের প্রায় সবটুকু জায়গা পর্বতময়; যেখানে রয়েছে সুন্দর প্রকৃতি, জীব বৈচিত্র্য ও প্রাণীকুল। সেখানে যান্ত্রিক শব্দ আর রাসায়নিক বর্জ্য নিরসনের ফলে কতটা অসহায় হবে মহেশখালীর রূপ? এটা বুঝার লোকসংখ্যাও কমে গেছে। বিদেশি জাহাজ দেখে আমরা হয়ত খুশি হয়ে যাবো দিনের বেলায়। আর রাতে তার সুখ কেড়ে নীরবে বিষাক্ত হবে আমার জন্মভূমি। প্রশ্ন রেখেছে বিবেক? মহেশখালী দ্বীপে এখন জনসংখ্যা কত? আগামী ৪০/৫০ বছর পর তা কত হতে পারে? মহেশখালীতে এখন বনভূমি ও জমির পরিমাণ কত? আগামী ৪০ বছর পরে বাড়তি জনসংখ্যার চাপ কত হবে? এমনকি মানুষ বসবাসের কতটুকু আবাসস্থল দরকার হবে? কতটুকু ভূমি আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পে দেওয়া যায়? সে হিসাবটুকু বুঝতে কি আমাদের খুব কঠিন কোন অঙ্ক কষতে হয়? সহজে অনুমান করে কী এর উত্তর পাওয়া যায় না?
তথ্য বলছে, চট্টগ্রাম উপকূলে আরও দুটি উল্লেখযোগ্য দ্বীপ রয়েছে একটি সন্দ্বীপ, আরেকটি কুতুবদিয়া। প্রকৃতির করাল গ্রাসে দ্বীপ দুটি ছোট হয়ে আসছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, অদূর ভবিষ্যতে সাগরের জায়গা সাগর দখল করে নিবেন। কিন্তু এখন সাগর নয়, বরং মানুষেই মহেশখালি দ্বীপকে এক সঙ্কটময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা জেটিঘাট ও সেতুর জন্য মানববন্ধন করি। কিন্তু যেখানে মহেশখালীতে মানুষ বসবাসের অযোগ্য হতে পারে। বিলীন হতে পারে সবুজঘেরা প্রকৃতি। সেখানে সেতু ও জেটিঘাট দিয়ে দ্বীপে কে আসবে; এটা সত্য, আমাদের উন্নয়ন যেমন দরকার তেমনি এই দ্বীপ রক্ষা করা জরুরি। বিশ্বের বহু দেশ জনবহুল এলাকায় কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হতে সরে আসছেন। অথচ আমরা স্পষ্ট করছি না, কীভাবে দুটির ভারসাম্য রক্ষা করে উন্নয়ন করা যায়।
সম্প্রতি, পুরাতন একটি ঘটনা বেশ আলোচিত হচ্ছে। মহেশখালী ফেরিঘাট হাজার হাজার পর্যটক ও ৫ লাখ মানুষের কাছে বিষপোড়ায় পরিণত হয়েছে। ফেরি নয়, জনগণ এখন মানববন্ধন করছে সেতুর দাবিতে। অথচ ঘাট পারাপারে জনদুর্ভোগ দীর্ঘ সময়ের। বলতে গেলে স্থানীয় এমপি ও মেয়রের নীরব ভূমিকায় মূলত এসব প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা তাঁদের কাছে মহেশখালীর জেটিঘাট দুধের গাভি। যে গাভি দুধ দেয় বার মাস। সুতরাং বুঝার কি বাকি থাকে আর।
নদীর নাব্যতা হ্রাস, খাল খননে দীর্ঘসূত্রিতা, ভরাট হয়ে যাওয়া সমুদ্রতটের নৌঘাট, সাধারণ মানুষের ঘাট পারাপারে সীমাহীন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণের দুর্ভোগ লাগবে জনপ্রতিনিধিদের উল্লেখ করার মতো তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনি। তাঁদের চলাচলের জন্য রিজার্ভ করা জলযান রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বারবার দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদন, কলাম প্রকাশিত হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি; নেবে কিনা তাও বলা মুশকিল। কারণ একটাই সরকার প্রধান রাজধানী থেকে এসব দেখছেন না। য
দিও উচ্চমহল বিষয়টি অবগত কথাটি কিন্তু আমার নয়। ২০১৫ সালে মহেশখালীর সাবেক ইউএনও মো. আবুল কামাল জানিয়েছিলেন, জেটিঘাটে জনদুর্ভোগের বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলে অবহিত। তৎকালীন ডিসি মো. আলী হোসেন বলেছিলেন,‘মহেশখালী জেটি ঘাটের ভোগান্তি আমার জানা আছে। জেটিঘাট সম্প্রসারণ করে মহেশখালী-কক্সবাজার নৌপথ নির্বিঘ্ন করার চেষ্টা করব।’ কিন্তু এসব সংস্কার।
সেই চেষ্টারও ৬ বছর পার হয়ে গেছে। এখনো চেষ্টার গাড়ি স্টেশনে পৌঁছাতে পারেনি। আর গত ৬ বছরে জেটিঘাট সম্প্রসারণ করার কোনো প্রকল্প নেয়া হয়েছে, এমন তথ্যও জানা নেই। জনগণের কষ্টের কথা চিন্তা করে যারা কিছু করবেন; মূলত তাঁরাই এসব অনিয়ম আর কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন। প্রভাবশালী এমপি, মেয়র এর বিরুদ্ধে গিয়ে কোন প্রশাসনিক কর্মকর্তা রাতারাতি মহেশখালী জেটিঘাটের উন্নয়নে হাত দেবে এমনটি ধারণা করাও অমূলক। কারণ ঘাট পারাপার হওয়া প্রতিটি মুমূর্ষু রোগী তাঁদের কোন আত্মীয় নয়, পরনের কাপড় অর্ধউলঙ্গ করে ট্রলারে উঠা নারীর সম্ভ্রমহানিতে তাদের বিবেক নাড়া দিয়েছে কিনা জানি না, রাতে নৌঘাটে সিগন্যাল বাতির অভাবে দুর্ঘটনায় পড়ে সাধারণ মানুষের জান মাল হারানোর বেদনায় দুঃখবোধ হয়েছে কিনা এমনটিও মনে হয় না, পর্যটক হয়রানি বন্ধ করে স্পিডবোট ব্যবহারের অনিয়ম ভেঙে ওয়াটার বাস বসানো ৫ দিনের বিষয় হলেও জনপ্রতিনিধিরা তা করতে রাজি নয়। কারণ তাদের ব্যবসা অন্যদিকে। বখাটেদের দৌরাত্ম্য, যাত্রী হয়রানি ও জর্জরিত নানা সমস্যায় তাঁরা লাভবান হওয়ায় মহেশখালী নৌঘাটের আজ এই অবস্থা বলে সচেতন মহলের ধারণা।
অতীতে জেটিঘাট থেকে ৩০-৪০ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করলেও বর্তমানে এ পরিমাণ দেড় দুই কোটি টাকার উপরে। জনগণ থেকে কর্তৃপক্ষ কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করলেও জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবার ধারে কাছেও নেই। ১৯৮৯ সালে তৎকালীন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ সরকারের আমলে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে ৫শ’ মিটার দৈর্ঘ্যের এই জেটি ও একই সঙ্গে জেটি সংলগ্ন আধা কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়। কিন্তু পলি জমে নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় সংকুচিত হয়ে যায় নৌঘাট। ফলে যাত্রী চলাচলে সৃষ্টি হয় মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা।
কোনো অদৃশ্য শক্তি নয়, রাজনীতিবিদদের অনাগ্রহ আর স্বেচ্ছাচারিতায় নৌঘাটের সংস্কার ও ফেরিঘাট অনুমোদন দেওয়ার পরও তা চালু হচ্ছে না, জনমনে এমনিই ধারণা। চালু হচ্ছে না কোনো ওয়াটার বাস। জনগণের সরকার আর উন্নয়নের সরকার বলে আমরা মুখে বুলি আওড়াই কিন্তু কত সরকার আসল আর কত গেলো। আলোর মুখ দেখেনি মহেশখালী জেটি। জানা যায়, এর মধ্যে ২০০০ সালে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে জেটিঘাটের ১শ’ মিটার অংশ সম্প্রসারণ করা হয়। আদিনাথ মন্দিরের পাশে তৈরি করা হলো নতুন জেটি। আজ অবধি তাও চালু নেই। নানাবিধ কারণে সুফল পাচ্ছে না জনগণ। কারণ ভাটার সময় রোগীসহ যাত্রীদের এক কোমর পানিতে নেমে যেতে হয়। জেটিঘাটে ভিড়তে পারে না নৌযান। ফলে নারী ও শিশু-বৃদ্ধদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।
যদি চীনের দুঃখ হয় হোয়াংহো নদী, যদি হয় বোয়ালখালীর দুঃখ কালুরঘাট সেতু, যদি হয় হাওড়ার দুঃখ দামোদর নদ; তবে সহজেই বলা যায় মহেশখালীর দুঃখ ফেরিঘাট। বহুলোক জড়ো হয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে মহেশখালী টু কক্সবাজার কিংবা খুরুশকুল সেতু আর ফেরির জন্য। কিন্তু এসব কান্না কখনো কারো দৃষ্টিঘোচর হয়েছে বলে মনে হয় না। হবেও না কারণ তাঁদের পকেটে কাঁচা তাজা মোটা অঙ্কের হিসাব জমা পড়ে।
২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে বর্তমান সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক এমপি বলেছিলেন, যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়টি সত্য। তাঁর কারণ হলো বাঁকখালী নদী ভরাটের ফলে দু’দিকেই সমস্যা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ে তথ্য পাঠিয়েছি অতি শিগগিরই মহেশখালী টু চৌফলদন্ডী ফেরিঘাট চালু হবে।’ বড় অবাক করা বিষয়, সব কিছু অনুমোদন হওয়ার পরও শিগগিরই শব্দটি শুনে সেদিন যারা আশায় বুক বেঁধেছিলেন তারাও এখন হতাশ, এর মাঝে পাঁচটি বছর পেরিয়ে গেলেও সেটি চালু হয়নি। আমরা সেই আবেগি মার্কা জনগণ হাতে প্রতীকী লাশ নিয়ে এবার এসেছি সেতুর দাবি নিয়ে। তারপরও যদি সংশ্লিষ্ট মহলের হৃদয় গলে।
পাঠক নিশ্চয় বলবেন, এরকম একটি সেতু নির্মাণ কোনো বিষয় নয়। যেখানে আজকের বাংলাদেশ পদ্মা সেতু তৈরি করছে, কর্ণফুলীর তলদেশে এশিয়ার বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু টানেল তৈরি করেছে, সেখানে নাব্যতা হারানো বাঁকখালি নদীতে মাত্র ৭ কিলোমিটারের একটি সেতুর স্বপ্ন দেখা খুবই স্বাভাবিক। এটি সম্ভব হতো যদি জনগণের নার্ভস বুঝার ক্ষমতা সম্পন্ন কোন শক্ত জনপ্রতিনিধি দাবি আদায়ে অটল মনোবল নিয়ে এগিয়ে যেতেন। কিন্তু কেউ আসছেন না। জনগণ সরব হলেও বরাবরই কৌশলী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
কক্সবাজারের প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের কথা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ‘কারাগারের রোজনামচা’ নামক স্মৃতিকথাতে লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি ১৯৬৬ সালের ১১ জুন শনিবার লিখেছিলেন, ‘জানি না সরকারি সাহায্য কত পরিমাণ পৌঁছাবে। সরকারি সাহায্যের নমুনা আমার জানা আছে। কারণ কক্সবাজারে ধ্বংসলীলা আমি দেখে এসেছি।’ (কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা ৮৩)। বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে বলা কথায় বুঝে নেন। আমাদের জনপ্রতিনিধিরা কি করছেন!
এমনকি কয়েক বছর আগে ‘মিডনাইট সার্ভাইভাল ডেডলাইন ফর দ্য ক্লাইমেট’ শীর্ষক ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড এটাই প্রকাশ করে যে, আমরা সচেতনভাবে জরুরি সহযোগিতার মাধ্যমগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছি, যা আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। কাজেই পৃথিবীকে বাঁচাতে ব্যবস্থা নেওয়ার সময় আজই, আগামীকাল নয়।”
তিনি বলেন, “আজ আমাদের সময়ের সব থেকে গুরুত্বপ‚র্ণ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ মোড়ে অবস্থান করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব আমাদের সভ্যতার ক্ষতি করছে, আমাদের গ্রহকে ধ্বংস করছে এবং আমাদের অস্তিত্বকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।”
লেখক : সাংবাদিক ও অনলাইন এক্টিভিটিস
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।