অনলাইন ডেস্ক: একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি এবং লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার মুমু’র (৪১) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় মহাখালীর বাসা লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ বিনা ময়নাতদন্তে লাশ হস্তান্তর করে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মায়ের তাকে দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে বনানী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।

পারিবারিক সূত্র জানায়, অর্পিতা লন্ডনে থাকতেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে অর্পিতার মা মারা যান। এরপর অর্পিতা দেশে ফিরেন। সম্প্রতি লন্ডনে তার বিয়ের জন্য এক পাত্র ঠিক করা হয়েছে। এজন্য অর্পিতার ইংল্যান্ড যাওয়ার কথা ছিল। এ জন্য ব্রিটিশ হাইকমিশনে তিনি কাগজপত্র জমা দেন। বৃহস্পতিবার সকালে ব্রিটিশ হাইকমিশনে তার সাক্ষাৎকার ছিল। কিন্তু বুধবার দুপুরে লন্ডনে পাত্র হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন। এ খবর অর্পিতা জানার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এ নিয়ে বুধবার রাতেও শাহরিয়ার কবির তার মেয়েকে সান্ত্বনা দেন। সর্বশেষ বুধবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে শাহরিয়ার কবির তার মেয়ের বেডরুমে গিয়ে সান্ত্বনা দেন এবং ঘুমিয়ে পড়ার কথা জানান। বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত অর্পিতার বেডরুমের দরজা বন্ধ দেখতে পায় পরিবারের সদস্যরা। সকালে ব্রিটিশ হাইকমিশনে অর্পিতার যাওয়ার কথা ছিল। এজন্য তার ছোট ভাই দ্বীপ বেডরুমের দরজায় নক করেন। অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দ্বীপ বাহির থেকে চাবি দিয়ে দরজা খোলেন। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে বাথরুমের বাথটবের ওপর জানালার গ্রিলের সঙ্গে গলায় রশি দিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায় অর্পিতাকে ঝুলতে দেখেন। পরে পুলিশকে খবর দেয় পরিবারের সদস্যরা।

বনানী থানার ওসি মোস্তাজিরুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়। তার বেডরুমের টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটি সুইসাইডাল নোট উদ্ধার করে পুলিশ। সুইসাইডাল নোটের উদ্ধৃতি দিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, নোটে অর্পিতা জীবন নিয়ে অনেক হতাশার কথা লিখেছেন। বিশেষ করে তার হবু বরের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর খবরটি জীবনের সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে তার বাবা শাহরিয়ার কবিরের সঙ্গে কথা বলেছিলাম।

শাহরিয়ার কবির পুলিশকে জানান, ওই খবরটিতে মুমু কান্নায় ভেঙে পড়ে। তাকে আমি অনেক সান্ত্বনা দিয়েছিলাম। বুধবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও তার সঙ্গে আমার অনেক কথা হয়। তাকে আমি আশ্বস্ত করেছিলাম। কিন্তু মেয়েটা বড্ড অভিমানী। মায়ের মৃত্যুর পর সে একবার ধাক্কা খায়। এ দফায় তার হবু বরের মৃত্যুর খবরটি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি।
– ইত্তেফাক