*আলীকদমে ৫৭ বিজিবি ছয় মাসে ৮০৭টি গরু আটক করেছে

*রাজস্ব আয়: ৬,৪৫,৬১,৪৪২ টাকা

*সুবিধাবাদীরা বিজিবির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে

মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান):

‘কিছু দুষ্কৃতিকারী ও চোরাচালানীতে সম্পৃক্ত সুবিধাবাদী লোকেরা বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসনের অভিযান ব্যাহত করতে গভীর ষড়যন্ত্র করছে। গত ছয় মাসে ৫৭ বিজিবি আলীকদমে ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ৮০৭টি গরু ও মহিষ আটক করেছে। ইতোমধ্যে ৬ কোটি ৪৫ লক্ষ ৬১ হাজার ৪৪২ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে।’

মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ তথ্য জানান আলীকদম ব্যাটালিয়নের (৫৭ বিজিবি) অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোঃ শহীদুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে লামা, আলীকদম ও বান্দরবান জেলা সদরের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

লেঃ কর্নেল মোঃ শহীদুল ইসলাম আরো বলেন, ৫৭ বিজিবি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩ কোটি ৬ লক্ষ ৬২ হাজার ৫৯০ টাকার অবৈধ কাঠ আটক করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে আলীকদমে গরু-মহিষ আটকের বিষয়ে স্থানীয় থানায় ২টি মামলায় দুইজন আসামী গ্রেফতার ও ২৪টি কাষ্টমস কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মামলা হয়েছে।

‘বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসনের চেষ্টার পরও গবাদিপশুর চোরাচালান হচ্ছে’ জানিয়ে ৫৭ বিজিবির অধিনায়ক বলেন, আলীকদম-মায়ানমার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কুরুকপাতা ও পোয়াহুমুরী এলাকার পাহাড়ি ঝিরি ও নদী পথ ব্যবহার করছে চোরাকারবারীরা। এ কারণে প্রতিদিন গবাদিপশু ও ইয়াবাসহ চোরাচালানী দ্রব্য আসছে। চোরাচালান নির্মূলে গত ১ জানুয়ারী থেকে আলীকদমের ‘জিলাই পাড়া অস্থায়ী যৌথ চেকপো’ স্থাপন করা হয়েছে। চোরাচালানরোধে স্থানীয় বাসিন্দাদের সরকারের নির্দেশনামতে এলাকায় গবাদি পশুর খামার গড়ে তোলার অনুরোধ জানান লেঃ কর্নেল মোঃ শহীদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, চোরাচালান দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে। সরকার হারায় রাজস্ব। অপরদিকে, দেশীয় খামার শিল্প হুমকিতে পড়ে। এসব রোধ করতে তিনি স্থানীয় প্রশাসন ও বাসিন্দাদের সহযোগিতা কামনা করেন।

‘কারা বিজিবি ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করছে, তাদের বিরুদ্ধে বিজিবি কী ব্যবস্থা নিচ্ছে’ সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে বিজিবি অধিনায়ক বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিজিবির বিরুদ্ধে ৫টি মামলা দায়ের করেছে চোরাচালানী সিন্ডিকেট। বিজিবি এসব মামলা আইনগতভাবে মোকাবেলা করছে। কয়েকটি মামলার রায় বিজিবির পক্ষে এসেছে। আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করছি। সকলে মিলে এ ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে চোরাচালান নির্মূল করার আহ্বান জানান তিনি।’

‘আলীকদম ব্যাটালিয়ন (৫৭ বিজিবি) মায়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে দায়িত্ব পালন করছে’ উল্লেখ করে ৫৭ বিজিবি’র অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোঃ শহীদুল ইসলাম আরো বলেন, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের অরক্ষিত সীমান্ত সুরক্ষায় ২০১৪ সালেল ২৩ ডিসেম্বর এ ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা হয়।

তিনি বলেন, ৫৭ বিজিবি’র ব্যাটালিয়ন সদর আলীকদমে অবস্থিত হলেও তাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সবগুলো ক্যাম্প থানচি উপজেলার রেমাক্রী ইউনিয়নের দূর্গম জনমানবহীন অঞ্চলে অবস্থিত। সেখানে বিজিবি সদস্যরা ৭৫ কিলোমিটার এলাকায় ৮টি বিওপিতে অপারেশনাল কাজে নিয়োজিত।

লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার ও মায়ানমারের সাথে ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করছে বিজিবি। এরমধ্যে কক্সবাজার রিজিয়ন দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বাংলাদেশ-মায়ানমারের সম্পূর্ণ সীমান্তসহ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তেরও দায়িত্ব পালন করছে।

বিজিবি অধিনায়ক বলেন, ৫৭ বিজিবি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৫ হাজার ৮০০ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনকে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পেইন সেবা ও দরিদ্র জনসাধারণের ৩ হাজার ১১৬টি পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে।