সিবিএন ডেস্ক:
অবশেষে সৌদিতে সেই বাংলাদেশি কর্মীর পাশে দাঁড়াচ্ছে জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেট। গত ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশি যুবক মো. আবুল বাশারকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে সৌদি আরবের আদালত। দেশটিতে প্রবেশের সময় তার ব্যাগে ইয়াবা পাওয়া যায় বলে এই সাজা পান তিনি। সেই ইয়াবা তার ব্যাগে ‘আচারের প্যাকেট’ বলে জোর করে ঢুকিয়ে দেন বিমানবন্দরের পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত এসআর সুপারভাইজার নুর মোহাম্মদ। রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেট।

করোনা মহামারিতে গত বছর ১২ ডিসেম্বর সৌদি আরব থেকে ছুটিতে দেশে আসেন আবুল বাশার। ছুটি শেষে কাজে ফিরতে এ বছর মার্চের ১১ তারিখ সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে আসেন। ওই দিন দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ৪ নম্বর গেট দিয়ে বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করেন তিনি। বোর্ডিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়ালে তাকে এক ব্যক্তি একটি প্যাকেট সৌদি আরব নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান। প্যাকেটে কিছু আচার ও খাবার আছে জানিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, সৌদিতে অবস্থানরত তার ভাই মো. সাইদ প্যাকেটটি বিমানবন্দর থেকে নেবেন।

অপরিচিত ব্যক্তির প্যাকেট নিতে অস্বীকৃতি জানান বাশার। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নিজেকে বিমানের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আবুল বাশারকে ভয়ভীতি দেখানো শুরু করেন। প্যাকেট না নিলে তাকে ফ্লাইটে উঠতে দেবেন না বলেও হুমকি দেন। তাতেও নিতে রাজি না হলে একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নিজেই জোর করে বাশারের ব্যাগে প্যাকেটটি ঢুকিয়ে দেয়। ভয়ভীতি দেখানোয় এবং ফ্লাইটের সময় হয়ে যাওয়ায় কারও কাছে কোনও অভিযোগ না দিয়ে ফ্লাইটে উঠে পড়েন বাশার। কিন্তু সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর নিরাপত্তাকর্মীরা তার ব্যাগ তল্লাশি করলে ওই প্যাকেটে ইয়াবা পায়। এরপর আবুল বাশারকে জেলে পাঠানো হয়।

জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা জানান, তার বিরুদ্ধে মাদক মামলায় ২০ বছরের সাজা দেয় সৌদির আদালত। বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার জন্য কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নোট ভারবাল এবং মক্কাস্থ সোমাইশিতে সামারি কোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয় এবং কনস্যুলেটের পক্ষ হতে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানান, ২০ বছর সাজা ঘোষণার পর এক মাসের মধ্যে আপিল করার সুযোগ আছে। সে জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে কনস্যুলেট। এজন্য ঢাকা থেকে প্রকৃত দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশে দায়েরকৃত মামলার এজাহার এবং এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের (এপিবিএন) কাছ থেকে বিশেষ প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া এই ঘটনার আরও প্রমাণ থাকলে তা পাঠিয়ে সহায়তা করার জন্য ঢাকায় চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

জেদ্দা কনস্যুলেটের শ্রম কাউন্সেলর আমিনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সুযোগ আছে। তার আগেই আমরা আপিল করবো।’

এদিকে আবুল বাশারের মুক্তির জন্য মঙ্গলবার বিকালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে দেখা করেন তার স্ত্রী রাবেয়া। লিখিতভাবে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন মন্ত্রীকে।

এ সময় মন্ত্রী তাকে সহায়তার আশ্বাস দেন। মন্ত্রী বলেন, এরইমধ্যে দূতাবাস বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। আমি বিমানবন্দরে কথা বলেছি। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দিতে বলেছি।