জাহেদুল ইসলাম, লোহগাড়া:

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া কুমিরাঘোনা আপিয়ার বর পাড়া এলাকার মো: মোজাম্মেল হক (৩০) নামের এক ব্যক্তিকে এলাপাতারি কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় উপজেলার বড়হাতিয়া কুমিরাঘোনা লাল মতির বাপের কাটা পাহাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। নিহত মোজাম্মেল হক ওই এলাকার মৃত মফজলুর রহমানের পুত্র। সে পেশায় একজন কাঠ ব্যবসায়ী। নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বড়হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এমডি জোনাঈদ চৌধুরী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, বড়হাতিয়া কুমিরাঘোনা লাল মতির বাপের কাটা পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় মোজাম্মেল হকের গাছ বাগান রয়েছে। ওই গাছ বাগান নিয়ে এলাকার অন্য একটি পক্ষের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। বিরোধপূর্ণ ওই গাছ বাগানের গাছ কাটার জন্য মোজাম্মেল শ্রমিক নিয়োগ দেন। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি শ্রমিকদের জন্য সকালের নাস্তা নিয়ে যান। পরে ফিরে আসার সময় লালমতির বাপের কাটা পাহাড়ের ঢালুতে পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। পরে ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন মোজাম্মেলকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেপার করেন। বিকেলে চমেক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন বলে নিহতের স্বজনরা জানান।

নিহত মোজাম্মেল ৮ মাসের কন্যা সন্তানের জনক। ২ বছর আগে সাতকানিয়া গারাংঙ্গিয়া সমশু মেম্বার পাড়া এলাকার গোলাম নবীর কন্যা জান্নাতুল ফেরদৌস শরীফার সাথে বিয়ে হয়।

স্থানীয় চৌকিদার মহিউদ্দিন বলেন, কাঠ ব্যবসায়ী মোজাম্মেলকে আহতবস্থায় এলাকার লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করেছেন। ঘটনার কারণ জানা যায়নি। তবে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ঘটনাটি ঘটতে পারে।

স্থানীয় আব্দুর মতলব বলেন, নিহত মোজাম্মেল বড়হাতিয়ার বহুল আলোচিত আনোয়ার হত্যা মামলার এজেহার নামীয় ১১ নাম্বার আসামী। সে আাদালত থেকে জামিনে এসেছে।

নিহতের বড় বোন কুলছুমা আক্তার বলেন, তার ভাই একটি ষড়যন্ত্র মুলক হত্যা মামলার আসামী। আদালত তাকে জামিন দিয়েছে। এমন মৃত্যু কাম্য নয়। তিনি আরো বলেন, মোজাম্মেল দীর্ঘ ৪/৫ দিন পর সফর শেষে রাঙ্গামাটি থেকে এসেছে।

নিহত মোজাম্মেলের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস শরীফা বলেন, ঘটনার সময় তার স্বামী তার বোন সাবিনার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে আসছিল। সাবিনা মোজাম্মেলের আর্তনাদ শুনতে পেয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য এনাম ও মোজাম্মেল মাষ্টারের সাথে তাদের দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছে। কেন তাকে হত্যা করা হল তা তিনি জানেন না। তিনি এ হত্যার উপযুক্ত বিচার চাই।

এইদিকে মোজাম্মেল মাষ্টারের সাথে মোটোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই ঘটনার সাথে তিনি জড়িত নন। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম শহরে শিক্ষকতা করে আসছেন। এলাাকায় যাচ্ছে না অনেক দিন হয়েছে। তবে নিহত মোজাম্মেলের পরিবারের সাথে বিরোধ চলছে। নিহতের ভাই চেকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী। জেলে রয়েছে। এই বিরোধে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এনাম মেম্বারকে পাওয়া না যাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ঘটনার খবর পেয়ে লোহাগাড়া থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই সোহরাওয়ার্দী ও এসআই আব্দুল আউয়াল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার তদন্ত চলছে বলে এসআই সোহরাওয়ার্দী জানান।

লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহজাহান পিপিএম বার বলেন, গাছ বাগান নিয়ে মোজাম্মেল হকের সঙ্গে স্থানীয় অন্য একটি পক্ষের বিরোধ চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে ওই বিরোধের জের ধরে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।