আনোয়ার হোছাইন, ঈদগাঁওঃ
চলমান কঠোর লকডাউন ও অতি দূরত্বের কারণে করোনা সেবা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ঈদগাঁও থানাধীন লাখো জনগোষ্টি। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকে ঈদগাঁও থানা এলাকায় আশংকাজনক হারে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে, সরকারও জনগণকে রক্ষায় দফায় দফায় লকডাউন অব্যাহত রাখে এবং অত্র এলাকায় সংক্রমণের হার দিন দিন অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত এনামুল হক জানিয়েছেন, বিগত দুই সপ্তাহে অর্ধশত ছাড়িয়ে গেছে সংক্রমণ। করোনা পজিটিভ ৩ জন মারা গেছে। করোনা উপসর্গে অনেকের মৃত্যু হয়েছে।
তারা আরো জানান, ঈদগাঁওতে যদি দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরু থেকে স্যাম্পল সংগ্রহের ব্যবস্থা নিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, তবে সংক্রমণের হার মানুষ সতর্ক হওয়ার কারণে আরো কমে আসত। এ সুযোগ না থাকায় উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হওয়াদের থেকে স্বজনের মাঝে ছড়িয়ে পড়াতে সংক্রমণের সংখ্যা ক্রমশঃ বাড়ছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছে। এতে জনসাধারণ আতংকের মধ্যে আছে বলে জানান।
এলাবাসী জানিয়েছে, কঠোর লকডাউনে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ। জেলা সদর হাসপাতাল অতি দূরত্বে হওয়ার কারণে জরুরি সেবা নিতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
বিশেষ করে করোনা পরীক্ষার স্যাম্পল দেয়া এবং ভ্যাকসিন গ্রহণে ঈদগাঁও থেকে কক্সবাজার শহরে যাওয়া লকডাউন চলাকালে অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
এমনকি হাজারো মানুষ ভ্যাকসিন নিবন্ধন করেও যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় টিকা গ্রহণে কক্সবাজার শহরস্থ জেলা সদর হাসপাতালে যেতে পারছেনা।
অপরদিকে চলমান মহামারিতে ঈদগাঁও থানাধীন বিশাল এলাকার ঘরে ঘরে বিভিন্ন রোগে অসংখ্য মানুষ কাতরাচ্ছে। তারা নিজেদের করোনা সংক্রমিত বলে অাশংকা করলেও অতি দূরত্ব এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না থাকায় ইচ্ছে থাকা সত্বেও করোনা স্যাম্পল জমা দিতে কক্সবাজার শহরে যাচ্ছে না।
বিভিন্ন মহলের দাবির মুখে দেরিতে হলেও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত ঈদগাঁও এলাকার সন্তান এনামুল হক স্যাম্পল কালেকশন শুরু করছেন।
এতে করে করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের হার ঈদগাঁও থানা এলাকায় অতীতের তুলনায় বহুগুন বৃদ্ধি পাবে। তাতে জনগণ ও সচেতন হবে।
এছাড়া জনসাধারণও আগ্রহী হয়ে নমুনা জমা দিচ্ছে।
একইভাবে যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশাল জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে ঈদগাঁও থেকে কক্সবাজার শহরের দূরত্ব ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিবেচনা করে যদি একটা করেনা ভ্যাকসিন বুথ পুনরায় স্থাপন করেন তাহলে ঈদগাঁওতে নিবন্ধিত জনসাধারণ সহজেই টিকা সেবা পাবে এবং অন্যরাও টিকা গ্রহণে এগিয়ে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।এতে করে সরকারের নেয়া যুগান্তকারী পদক্ষেপ সহজেই বাস্তবায়ন হবে ।
ঈদগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম অতি দ্রুত ঈদগাঁওতে একটি টিকা বুথ স্থাপন জরুরি বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, সংক্রমণ বৃদ্ধির পাশাপাশি জেলা সদর হাসপাতাল দূরে হওয়ায় লকডাউনের মধ্যে টিকা গ্রহণে কক্সবাজার শহরে হাসপাতাল যাতায়াত অসম্ভব এবং ছোটখাট যানগুলো লকডাউনের অজুহাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে কর্মহীন মানুষদের চরম হয়রানি করছে।
ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ঈদগাঁও থানা এলাকা থেকে কক্সবাজার শহরের দূরত্ব, জনসংখ্যা, চলমান লকডাউন এবং করোনা সংক্রমণের উর্ধমুখিতা বিবেচনা করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মীদের সহযোগিতায় এ মুহূর্তে ঈদগাঁওতে একটি করোনা ভ্যাকসিন ও স্যাম্পল কালেকশন বুথ স্থাপন অতি জরুরি।
তিনি আরো জানান, সরকারের উর্ধতন বিভিন্ন স্থর দায়িত্বরত ঈদগাঁওর কৃতি সন্তানরা একটু আন্তরিক হলেই অত্র থানার বিশাল জনগোষ্ঠী চলমান জরুরি সময়ে করোনা সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা সহজেই ঈদগাঁওতে পাবেন ।
ঈদগাঁওর বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী কামাল উদ্দিন জানান, দিন দিন করোনা রোগির সংখ্যা বাড়ছে। তাই জনগণ যাতে দ্রুত ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে পারে। সেজন্য ঈদগাঁওতে একটি টিকা কেন্দ্র জরুরি। গাড়ি চলাচল বন্ধ এবং কক্সবাজার শহর দূরে হওয়ায় নিবন্ধন করেও অনেকে টিকা নিতে পারছেনা। এছাড়া ইতোপূর্বে অস্থায়ীভাবে চালু করা বুথটি ভারত থেকে আসা প্রথম চালানের টিকাশেষ হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়। তিনিসহ অনেকে প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ আর নিতে পারেননি। পরে চীনসহ অন্য দেশ থেকে দেশে পর্যাপ্ত টিকা আসলেও ঈদগাঁওয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া টিকা বুথটি পুনরায় এখনো চালু হয়নি। তাই তিনি উক্ত টিকা বুথটি পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট।
ঈদগাঁওতে বসবাসরত কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ আবদুর রহিম আমানীর সাথে কথা হলে জানান, ঈদগাঁও থানাধীন ৫ ইউনিয়ন যথাক্রমে ঈদগাঁও, ইসলামপুর, ইসলামাবাদ, জালালাবাদ ও পোকখালীর লাখো জনগোষ্ঠী লকডাউনের মধ্যে কক্সবাজার শহরে গিয়ে টিকা গ্রহণ করা এবং নিয়মিত স্যাম্পল জমা দেয়া তাদের জন্য চরম কষ্টসাধ্য। দূরত্ব, জনসংখ্যা এবং লকডাউন বিবেচনা করে ঈদগাঁওতে একটি বুথ স্থাপন করলে জনগণের জন্য করোনা সেবা গ্রহণ সহজ হবে।