মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে স্থানীয় জনসাধারণের সহয়তায় জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক হাই কমিশন ইউএনএইচসিআর-এর ভূমিকা মাইলফলক হয়ে থাকবে। ইউএনএইচসিআর-এর বহুমুখী আর্থ সামাজিক সহায়তা স্থানীয় জনসাধারণের টেকসই ও মার্যাদাপূর্ণ জীবন মানোন্নয়নে সহায়ক হবে।

কোভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতিতে উখিয়া- টেকনাফের ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ হাজার ৮৮৭ টিরও বেশি পরিবারকে ইউএনএইচসিআর এর প্রদত্ত আর্থিক সয়াহতা কার্যক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন এ কথা বলেন।

ইউএনএইচসিআর-এর হেড অব অপারেশন্স মারিন ডিন কারদোমোকাজ (Mr. Marin Din Kajdomcaj) এর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জাতীয় কমিটির মহাসচিব ও সরকারের সাবেক সচিব ফিরোজ সালাহউদ্দিন, অতিরিক্ত আরআরআরসি (উপসচিব) সামছু দ্দৌজা নয়ন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহা. শাজাহান আলি, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, ইউএনএইচসিআর-এর লিয়াঁজো অফিসার ইফতেখার উদ্দিন বায়েজিদ, ইউএনএইচসিআর এর লাইভলী হোড অফিসার সুব্রত কুমার চক্রবর্তী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন ইউএনএইচসিআর-কর্তৃক কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ৩৫ কোটি ব্যয়ে আধুনিক ICU এবং HDU স্থাপন, কক্সবাজার সরকারি কলেজে সুপেয় পানির ব্যবস্থা, জেলার ৫ টি কলেজে শিক্ষার্থীদের পরিবহনে বাস প্রদান, প্রায় ১০০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কার ও মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করা, ৪০ টি সাইক্লোন সেল্টারকে সংস্কার, টেকনাফে সুপেয় পানির জন্য বৃহৎ একটি প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া সহ স্থানীয় জনগণের কল্যান ও সমস্যা দূরীকরণে আরো বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করায় ইউএনএইচসিআর কর্তৃপক্ষের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কৃতজ্ঞতা জানান। ডিসি মোঃ কামাল হোসেন আরো বলেন, বিগত ২০১৭ সাল থেকে স্থানীয় জনসাধারণের কল্যানার্থে ইউএনএইচসিআর এর গঠনমূলক কার্যক্রম অনেকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণ এখন তার সুফল ভোগ করছে। তিনি স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহায়তার পরিধি শুধুমাত্র উখিয়া-টেকনাফে সীমাবদ্ধ নারেখে পুরো কক্সবাজার জেলায় সম্প্রসারিত করার জন্য ইউএনএইচসিআর-এর কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।

জেলা প্রশাসক বলেন, এ সহায়তা মোবাইল মানির মাধ্যমে অসহায়, নিন্মআয়ের লোক, প্রতিবন্ধী, দারিদ্রের কাছে যথাসময়ে পৌঁছে যাবে। আর যারা এ সহায়তার আওতায় আসেনি সরকার ও ইউএনএইচসিআর যৌথভাবে কাজ করলে তারাও এ সুবিধা পাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে চলমান সহায়তার জন্য ইউএনএইচসিআর-কে ধন্যবাদ জানান।

সভাপতির বক্তব্যে ইউএনএইচসিআর-এর হেড অব অপারেশন্স মারিন ডিন কারদোমোকাজ বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরনার্থী ক্যাম্পের আশ্রয়দাতা হিসাবে বাংলাদেশ সরকার ও এদেশের মানুষ মানবতা ও সহানুভূতিশীলতায় বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে। কোভিড-১৯ এ ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় জনসাধারণের আর্থ সামাজিক সংকটে ও জীবনযাত্রায় ইউএনএইচসিআর সবসময় আর্থিক সহানুভূতির বিষয়টি অগ্রাধিকার দিবে বলে জানান মি. মারিন ডিন কারদোমোকাজ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার এর বিশ্বহিতৈষী শেখ থানি বিন আবদুল্লাহ আল থানি ইউএনএইচসিআর-কে ৪৩ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছেন। এই অনুদানের বড় একটি অংশ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরনার্থী ও স্থানীয় জনসাধারণের টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন গড়তে ব্যয় করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা স্থানীয় জনসাধারণের জন্য সহায়তার অর্থ অপেক্ষাকৃত বেশী প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করার আহবান জানিয়ে বলেন, মাদক নির্মুল, শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা, অত্যাবশ্যকীয় কাজ সহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে আরো বেশি বরাদ্দ দেওয়ার জন্য ইউএনএইচসিআর এর প্রতি অনুরোধ জানান। অনুষ্ঠানে রেডক্রিসেন্ট, এনজিও ব্র্যাক, সিএনআরএস, ওয়ার্ল্ড ভিশন, মুক্তি’র প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

প্রসংগত, সরকারের সাথে ইউএনএইচসিআর এর এই নিয়মিত সামাজিক সুরক্ষা সহায়তা বিদ্যমান ১৬৭৮৭ পরিবার থেকে আরো ১৯০০০ পরিবার বাড়িয়ে মোট ৩৫৭৮৭ পরিবারে উন্নীত করা হয়েছে।