হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :

নাইক্ষ্যংছড়ির আওয়ামী লীগ নেতা মো.ইসমাইল আত্মহত্যা করেনি। তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি পারিবারিকভাবে শান্তিতে ছিলেন। সোমবার (১মে) সকাল ১১টায় মো.ইসমাইলের জানাজা নামাজের পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে-হাজারো জনতার সামনে তাঁর জামাতা আলীকদম উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আনোয়ার জাহেদ চৌধুরী এসব কথা বলেন। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরস্থ ঈদগাহ মাঠে তাঁর জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা কলিম উল্লাহ।

আনোয়ার জাহেদ চৌধুরী কান্না জড়িত কন্ঠে আরো বলেন, ‘এ ঘটনা কখনো আত্মহত্যা হতে পারেনা। কারণ হোটেলের রুমের জব্দ তালিকায় চাবি পাওয়া যায়নি। আমি এ বিষয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। আমার যখন বিয়ে হচ্ছিল তখন আমি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান হওয়াতে গর্ব করে আমার মতো এক বেকার ছেলেকে সেই সময় তাঁর মেয়ে তান্নিকে বিয়ে দিয়েছিল। তিনি দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু এর পরিণতি হলো অনেক ভয়াবহ। শেষ পর্যন্ত দলের কারণে প্রাণটা গেল। তিনি যদি দলের জন্য এবং প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির সামন্যতমও উপকার করেন, তাহলে সুষ্ঠু বিচার চাই। কেউ যাতে এ ঘটনাকে ভিন্নভাবে রূপ দিতে না পারে-সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’

তবে মো.ইসমাইলের ছোট বোনের স্বামী, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছালামত উল্লাহ এবং শ্যালক নুর কাশেম বলেন, ‘ নাইক্ষ্যংছড়িতে মো.ইসমাইলের কোন বড় ধরণের শত্রু নেই। তিনি সব সময় জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকে অনেক ধরণের ফাঁয়দা হাসিলের চেষ্টা চালাচ্ছে। দয়া করে আপনারা ইসমাইল সাহেবকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আগে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব হয়। ময়নাতদন্তের পর এ ব্যাপারে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যসচিব মোহাম্মদ ইমরানের পরিচালনায় জানাজা নামাজের পূর্বে আরো বক্তব্য দেন বান্দরবান পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসলাম বেবী, পার্বত্য বান্দরবান আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য শফিকুর রহমান, জেলা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ মোস্তফা, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্য ক্যউচিং চাক, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ.এইচ.এম তৌহিদ কবির, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুর রহমান, এমপি প্রতিনিধি খাইরুল বাশার ও মো.ইসমাইলের অন্যতম সহযোদ্ধা ছৈয়দ আলম।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসলাম বেবী বলেন, ‘মো.ইসমাইলের মতো দলের নিবেদিতপ্রাণ অনেকটা বিরল। তাঁর অকাল মৃত্যুতে দলীয় নেতাকর্মীতের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্যশৈহ্ণা মহোদয় অনেক মর্মাহত হয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখে আমরা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিব।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ক্যউচিং চাক বলেন, ‘দু:সময়ে মো.ইসমাইল দলের হাল ধরেছিলেন। তাঁর অভাব পূরণ হওয়ার নয়। আজ থেকে তাঁর কলেজ পড়–য়া মেয়ে তিথির সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি নিলাম। আমার পাঁচ মেয়ের সঙ্গে এখন থেকে সেও আমার মেয়ে।’

মো.ইসমাইলের অন্যতম সহযোদ্ধা ছৈয়দ আলম বলেন, ‘১৯৪৮ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মো.ইসমাইল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের অভিভাবক ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে আমরা মা, মাটি ও মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে তিনি কাজ করে গেছেন।’

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ.এইচ.এম তৌহিদ কবির বলেন, ‘ইসমাইল সাহেবের কাছে যে প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক জ্ঞান ছিল-তা অনেক শীর্ষ নেতার মধ্যেও নেই। তাঁর অকাল মৃত্যু মেনে নেওয়ার মতো নয়।’

এদিকে জানাজা নামাজ শেষে মো.ইসমাইলের মরদেহ স্থানীয় মসজিদ পাড়ার কবরস্থাণে দাফন করা হয়। এসময় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো.কামাল উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আবু তাহের, তসলিম ইকবাল চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা মো. শফি উল্লাহসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী পরিবারের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার শহরের লালদীঘির পাড়স্থ পালংক্যি নামের একটি আবাসিক হোটেল থেকে রোববার (৩০এপ্রিল) বিকেলে মো. ঈসমাইলের (৪৮) ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। হোটেলের ১০৭ নম্বর কক্ষ থেকে বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ঈসমাইলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সংগঠনবিরোধী কাজ করছেন এবং তাঁকে হুমকি দিয়েছেন অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ নেতা মো.শফি উল্লাহর বিরুদ্ধে গত শনিবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পরদিনই তাঁর লাশ উদ্ধার করা হলো। মো. ঈসমাইল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের মসজিদ পাড়ার গোলাম রসুল মোল্লার ছেলে। তবে তাঁর আদি বাড়ি বরিশাল বিভাগে।