মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

এক লক্ষ ৪০ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট পাচারের মামলায় ২ জনকে মৃত্যুদন্ড, ২ জনকে যাবজ্জীবন (৩০ বছর) কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একইসাথে প্রত্যককে এক লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর করে সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। দন্ডিতদের মধ্যে ৩ জন রোহিঙ্গা শরনার্থী।

কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আবদুর রহিম মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) এ রায় ঘোষণা করেন। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।

দন্ডিত আসামীদের পরিচয় :
মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীরা হলেন, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শরনার্থী মোঃ হোসেনের পুত্র নুর মোস্তফা (৩০) ও কক্সবাজার পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের কুতুবদিয়া পাড়ার মৃত নজির আহমদের পুত্র সোনামিয়া (২৫)। যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া আসামীরা হলেন, খুলু মিয়ার পুত্র মোঃ আঃ গফুর ও মৃত মোঃ আলমের পুত্র মোঃ আইয়ুব প্রকাশ তৈয়ব। যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত ২ জনই উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শরনার্থী। দন্ডিত সকল আসামী পলাতক রয়েছে। রাষ্ট্র পক্ষে একই আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম মামলাটি পরিচালনা করেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
২০২০ সালের ১ মার্চ কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের বৌদ্ধ মন্দির সড়কে কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম এক অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা নুর মোস্তফা, সোনামিয়া, মোঃ আঃ গফুর ও মোঃ আইয়ুব প্রকাশ তৈয়বকে আটক করে। পরে তাদের দেখানো মতে মাটির নীচ থেকে ৯০ হাজার পিচ এবং তাদের ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস থেকে ৫০ হাজার পিচ সহ মোট এক লক্ষ ৪০ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করা হয়। একইসাথে মাইক্রোবাসটি (নম্বর-চট্ট মেট্টো-চ-১১-৫৪৫৭) জব্দ করা হয়।

এ ঘটনায় কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক এস.এম মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ধৃত রোহিঙ্গা নুর মোস্তফা, সোনামিয়া, রোহিঙ্গা মোঃ আঃ গফুর, রোহিঙ্গা মোঃ আইয়ুব প্রকাশ তৈয়ব এবং পলাতক ব্যক্তি আবদুর রহমানকে আসামী করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে রামু থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার রামু থানা মামলা নম্বর : ০১, তারিখ : ০২/০৩/২০২০ ইংরেজি, যার জিআর মামলা নম্বর : ৭৫/২০২০ ইংরেজি (রামু) এবং এসটি মামলা নম্বর : ৯৯৪/২০২২ ইংরেজি।

বিচার ও রায় :
মামলাটি বিচারের জন্য ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারকার্য শুরু হয়। মামলায় সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীদের পক্ষে তাদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের জন্য সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য্য করা হয়।

রায় ঘোষণার দিনে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আবদুর রহিম ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) ধারার ১০(গ) সারণি মতে মামলার আসামী রোহিঙ্গা নুর মোস্তফা ও সোনামিয়াকে দোষী সাব্যস্থ করে মৃত্যুদন্ড এবং একই আইনে আসামী রোহিঙ্গা মোঃ আঃ গফুর ও রোহিঙ্গা মোঃ আইয়ুব প্রকাশ তৈয়বকে যাবজ্জীবন (৩০ বছর) কারাদন্ড দিয়েছেন। একইসাথে প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর করে সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। রায়ে অপর আসামী আবদুর রহমানকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, জব্দকৃত মাইক্রোবাসটি নিলাম দিয়ে, নিলামের অর্থ রাষ্ট্রের কোষাগারে জমা করার জন্য রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। পলাতক দন্ডিত আসামীরা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক ধৃত হওয়ার পর থেকে সাজা কার্যকর হবে বলে রায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।