ওমর ফারুক:
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নে অবস্থিত মাছকারিয়া বিল, যা এখন “শাপলা বিল” নামে অধিক পরিচিত, শীতের আগমনে অপূর্ব সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ভোর থেকেই বিলজুড়ে লাল শাপলার সমারোহ প্রকৃতিপ্রেমীদের দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে। শীতের সকালের নরম আলো, নীল জলের উপর ভেসে থাকা লাল শাপলা আর চারপাশে কচুরিপানার সবুজ পর্দা- পুরো এলাকাকে যেন এক স্বর্গীয় সজ্জায় সাজিয়ে তোলে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শাপলা ফুল সাধারণত ভোর ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত পূর্ণ রূপে ফুটে থাকে। এই সময়টাতেই পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যায়। অনেকেই সূর্যোদয় দেখার সাথে সাথে নৌকাযোগে বিলের গভীরে প্রবেশ করে ফুলের ফাঁকে সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
সেই সাথে বিলের চারদিকে অতিথি পাখির বিচরণ, হালকা কুয়াশায় মোড়ানো পরিবেশ-এসব মিলিয়ে সৃষ্টি হয় মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
শাপলা বিলের অতীত পরিচিতিও রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এটি “মাছকারিয়া বিল” নামে পরিচিত ছিল, কারণ এ বিল ছিল স্থানীয় মাছের অন্যতম উৎস। শীতকালে বিলের পানির স্বচ্ছতা ও শাপলা ফুলের আধিক্য বাড়ার পর থেকেই এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। বিশেষত গত দুই-তিন বছর ধরে স্থানীয়রা এই বিলকে ঘিরে পর্যটনবান্ধব উদ্যোগ নেওয়ায় এর খ্যাতি আরও ছড়িয়ে পড়ছে।
এখানকার পর্যটন বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতেও এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। প্রায় ৪০–৫০টি পরিবার এখন নৌকা ভাড়া দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পর্যটকদের সুবিধার্থে বিলের চারপাশে ছোটখাটো খাবারের দোকান, বিশ্রামকেন্দ্র এবং ছবি তোলার স্পট তৈরি হয়েছে। স্থানীয় নৌকার মাঝিরা জানান, প্রতিদিন শতাধিক পর্যটক এখানে আসেন, বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ভিড় থাকে বেশি।
তবে সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেক পর্যটক ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছেন, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং বিলের স্বাভাবিক ভারসাম্যের জন্য হুমকি। এ কারণে ইউনিয়ন পরিষদ ফুল ছেঁড়া নিষিদ্ধ করে সচেতনতামূলক ফেস্টুন টানিয়েছেল গেলদে বছরে। কিন্তু এইবছর তা আর কার্য্যকর নেই!
সমাজকর্মী ওমর ফারুক বলছেন, শাপলা বিলকে টেকসই পর্যটন স্পটে রূপ দিতে হলে এখনই সংরক্ষণমূলক ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।
স্থানীয় প্রশাসন, পর্যটক ও জনগণের যৌথ উদ্যোগে যদি এই প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা যায়, তাহলে শাপলা বিল শুধু উখিয়ারই নয়, বরং পুরো কক্সবাজারের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। শীতের মৌসুমে মনোমুগ্ধকর এই শাপলা বিল প্রকৃতিপ্রেমী ও পর্যটকদের জন্য এখন এক নতুন স্পন্দনের না।
