মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
কক্সবাজারের সর্বস্থরের মানুষের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে লিগ্যাল এইড এর কার্যক্রমকে সকলের দ্বোর গোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে। যাতে অস্বচ্ছল, অসহায়, নারী, প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, নির্যাতিতা, তৃতীয় লিঙ্গ সহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সকলেই সহজে দেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার সুফল পায়।
বুধবার (৫ নভেম্বর) কক্সবাজার জেলা আইনগত সহয়তা কমিটির মাসিক সভা ও সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে কক্সবাজারের নবাগত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আবদুর রহিম একথা বলেন। জেলা জজ আদালত ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির সভাপতি বিচারক মোহাম্মদ আবদুর রহিম জেলা বিচার বিভাগের মামলার আধিক্যের কথা উল্লেখ করে আরো বলেন, নিয়মিত আদালতে মামলা পরিচালনার চেয়ে মামলার জট কমাতে হলে এডিআর (অলটারনেটিভ ডিসপুট রেজুলেশন) ও মেডিয়েশন উপর গুরুত্ব দিতে হবে। লিগ্যাল এইড কার্যক্রমের ব্যাপ্তি আরো বাড়াতে হবে। সরকারও এ বিষয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে। যা নিয়মিত আদালতে মামলার চাপ কমাতে সহায়ক হবে। কক্সবাজারের লিগ্যাল এইডের কার্যক্রমকে আরো বেগবান ও গতিশীল করতে তিনি সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, জাতিসংঘের সংস্থা, প্যানেল আইনজীবী সহ সকল স্টেকহোল্ডার সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক নিশাত সুলতানা ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার হামিমুন তানজিন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ছৈয়দ আলম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার, জিপি অ্যাডভোকেট শামশুল হুদা, কক্সবাজারের জেল সুপার মোঃ জাবেদ মেহেদী, লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রতিভা দাশ, অ্যাডভোকেট সাকী এ কাউসার, অ্যাডভোকেট সেজান এহসান, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী, অ্যাডভোকেট
বিশ্বজিৎ ভৌমিক, অ্যাডভোকেট আবু হেনা ইয়াসমিন প্রমুখ।
সভায় জেলার সার্বিক লিগ্যাল এইড কার্যক্রমের উপর পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন সিনিয়র সিভিল জজ ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার হামিমুন তানজিন। সভায় জানানো হয়, কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে শুধুমাত্র গত সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর ২ মাসে ৮৯’০৪% মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। যা আবেদন নিষ্পত্তির একটি রেকর্ড। বিভিন্ন খাতে ৯ লক্ষ ১০ হাজার ৬০০ টাকা অর্থ আদায় করা হয়েছে। আদায়কৃত অর্থের মধ্যে মোহরানার অর্থ, ক্ষতিপূরণের অর্থ, চিকিৎসা খরচ, জমি জমার অর্থ, বিদেশে নেওয়ার জন্য দেওয়া অর্থ ফেরত নেওয়া, সন্তান ও স্ত্রীর ভরনপোষণের অর্থ সহ আরো বিভিন্ন খাতের অর্থ রয়েছে। ২ মাসে ৭৬টি মামলায় প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে ৪২৩ টি আবেদন বিচারের জন্য জমা পড়েছে। ২ মাসে মোট ৩২৬ টি এডিআর নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তারমধ্যে, প্রিকেইস ৩০৯ টি এবং পোস্ট কেইস ১৭টি। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের এসব উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য সভায় বক্তারা ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে, কক্সবাজারের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইরফানুল হক চৌধুরী, সিনিয়র সিভিল জজ মোঃ বেলাল উদ্দিন, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ডা. টিটু চন্দ্র শীল, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি কোর্ট ইন্সপেক্টর শাহ আলম, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির কর্মকর্তাবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, প্যানেল আইনজীবী সহ জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রজেক্ট ম্যানেজার নাজমুল বরাত রনি কক্সবাজারে তাদের আইনগত সহয়তা কার্যক্রম নিয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন।
