মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

অভিবাসন কর্মীগণ তাদের রক্তঝরা শ্রমের অর্থ দেশে পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করছে। যা দেশের মানুষ ও মাতৃভূমির জন্য খুবই কল্যানকর। তাই রেমিট্যান্স যোদ্ধা অভিবাসন কর্মীদের সব ধরনের প্রতারণার ছোবল থেকে সুরক্ষা করে রাষ্ট্রের স্বার্থে তাদের সকল সংকট ও সমস্যা দূরীকরণের সংশ্লিষ্ট সকলকে কাজ করতে হবে। তাদের দুঃখ, দুর্দশা লাগবে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরো সচেতন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।

গত ২০ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি (BNWLA) এর উদ্যোগে কক্সবাজার জেলা জজ আদালত এর সম্মেলন কক্ষে আইনি প্রক্রিয়ায় অভিবাসী কর্মীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ (ভা:) মামুনুর রশিদ একথা বলেন। সুইজারল্যান্ড সরকারের অর্থায়ন ও হেলভেটাস বাংলাদেশ এর কারিগরি সহযোগীতায় সিম্স Strengthened and Informative Migration Systems (সিম্স প্রকল্প ২য় পর্যায়) ‘এক্সেস টু জাস্টিস’ কার্যক্রমের আওতায় অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় তিনি আরো বলেন, বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতারণা থেকে রক্ষায় কম্যুনিটি পর্যায়ে আরো সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। অবৈধ পন্থায় বিদেশ যাওয়াকে সর্বোচ্চ নিরুৎসাহিত করতে হবে। বৈধ অভিবাসীদের সুযোগ সুবিধা ও মর্যাদা বাড়তে হবে। ভারপ্রাপ্ত জেলা জজ সিম্স প্রকল্পের আওতায় চলমান মামলাগুলো গুরুত্বেও সাথে দেখার পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী
সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সীমা জহুর এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আক্তার হোসেন অভিবাসন কর্মীদের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে গুরুত্বের সাথে বিবেচনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আইন আইনের গতিতে চলে। বিচারকেরা বাদী ও আসামী দুইপক্ষকে বিবেচনা করেই নিরপেক্ষ ভাবে বিচার করেন। বিচার করার জন্য প্রমানিক দলিলের প্রয়োজন হয়। এজন্য বৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ন। অপর বিশেষ অতিথি কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার হামিমুন তানজিন তাঁর বক্তব্যে আইনী সহযোগিতা প্রত্যাশি অভিবাসন কর্মীদের জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে অভিযোগ দায়ের করতে উৎসাহ প্রদান করেন। এমনকি কোর্টে মামলা করার প্রয়োজন হলে, সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। বিশেষ অতিথি কক্সবাজার পিবিআই এর এসপি মতিয়ার রহমান তাঁর বক্তব্যে, অভিবাসনকর্মীদের মামলার তদন্তকার্যক্রম দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার নিশ্চয়তা দেন।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে কক্সবাজার জেলায় অভিবাসন কর্মীদের জন্য আইনী সেবা কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, সুইজারল্যান্ড সরকার ও হেলভেটাস বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।

ওয়ার্কশপটি সঞ্চালনা এবং বিষয়বস্তুর উপর পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন সিম্স প্রকল্প ব্যবস্থাপক রাফাতুর রহমান রুবা। সিম্স প্রকল্পের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশি’র প্রতিনিধি রাশিদা খাতুন প্রকল্পের অব্যাহত সচেতনতা কার্যক্রম সম্পর্কে সভায় অবহিত করেন।

ওয়ার্কশপে অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ছৈয়দ আলম, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ আফরোজ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম গিয়াস উদ্দিন, অ্যাডভোকেট আবদুস শুক্কুর, কোর্ট ইন্সপেক্টর শাহা আলম প্রমুখ। ওয়ার্কশপে অন্যান্যের মধ্যে কক্সবাজারের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইরফানুল হক চৌধুরী, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মোঃ আসিফ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা সাত্তার, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অভিজিৎ চৌধুরী, সিনিয়র সহকারী জজ মো: বেলাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট সাকী এ কাউসার, অ্যাডভোকেট ইয়াসমিন শওকত জাহান রোজী, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী, অ্যাডভোকেট চৌধুরী ফাহাদ বিন ফিরোজ, এপিপি অ্যাডভোকেট সাজিদ আবেদীন, অ্যাডভোকেট শবনম মুশতরী সহ বিচারক, আইনজীবী, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা ওয়ার্কশপে অংশ নেন।

ওয়ার্কশপে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির প্যানেল ল’ইয়ার অ্যাডভোকেট প্রতিভা দাশ। ওয়ার্কশপটি সমন্বয় করেন অ্যাডভোকেট বিশ্বজিৎ ভৌমিক। ওয়ার্কশপে সৌদি আরব ফেরত একজন ভূক্তভোগী নারী অভিবাসনকর্মী তাঁর করুণ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।