পেকুয়া প্রতিনিধি
সারাদেশের মতো কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায়ও শুরু হয়েছে জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন। সরকার ঘোষিত এই মাসব্যাপী কর্মসূচির আওতায় উপজেলায় প্রায় ৫৬ হাজার শিশুকে বিনামূল্যে টাইফয়েড ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। রবিবার (১২ অক্টোবর) উপজেলার শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আলহাজ্ব নুরুল আমিন চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজিবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. উম্মে কুলছুম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইসা, শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক বেলাল উদ্দিন (সঞ্চালক), স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. ছৈয়দ ছওয়ার কামাল, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক মাসুক আহমেদ, ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মোস্তাক আহমেদ প্রমুখ।
জাতীয়ভাবে ঘোষিত এই কর্মসূচির আওতায় ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সব শিশুকে ইনজেকটেবল টাইফয়েড টিকা দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন পরিচালিত এই কর্মসূচিতে জন্মসনদ না থাকলেও কোনো শিশুকে বাদ দেওয়া হবে না, এমনকি দুর্গম এলাকাতেও পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
পেকুয়া উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে ১০০টির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে টিকাদান নিশ্চিত করতে প্রতিটি এলাকায় মোবাইল টিম ও রেজিস্ট্রেশনের জন্য সহায়ক কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে।
ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, “টাইফয়েড একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা সঠিক সময়ে টিকা দিলে সহজেই প্রতিরোধ করা যায়। এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে উপজেলার প্রতিটি শিশুকে সুরক্ষার চাদরে ঢেকে ফেলা আমাদের লক্ষ্য।”
ডা. উম্মে কুলছুম বলেন, “অনেক সময় বাবা-মায়েরা সন্তানদের টিকা দিতে অবহেলা করেন। আমরা চাই প্রতিটি অভিভাবক সচেতন হোক এবং এই কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ করুক।”
কৃষি কর্মকর্তা মো. ইসা বলেন, “একজন কৃষক যেমন সুস্থ শ্রমিক ছাড়া চাষাবাদ করতে পারে না, তেমনি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুস্থ না থাকলে আমরা উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে পারব না।”
টাইফয়েড একটি জটিল ও সংক্রামক রোগ যা Salmonella Typhi নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ছড়ায়। পানিবাহিত এই রোগে প্রতিবছর বাংলাদেশে লক্ষাধিক শিশু আক্রান্ত হয় এবং অনেকে মৃত্যুবরণ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিরোধমূলক টিকা গ্রহণই এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর সুপারিশ অনুযায়ী ইনজেকটেবল টাইফয়েড ভ্যাকসিন শিশুদের জন্য নিরাপদ এবং কার্যকর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে এবারই প্রথমবারের মতো এ টিকাকে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অভিভাবকদের জন্য অনলাইন ও অফলাইন—দুইভাবেই টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল ও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকেও রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
সরকারের এই যুগান্তকারী উদ্যোগ শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বক্তারা অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা নির্দ্বিধায় তাদের সন্তানদের এই কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসেন।
