এম. মনছুর আলম, চকরিয়া;
২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর নতুনভাবে প্রাণ ফিরে পেয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা বিএনপির রাজনীতি। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আগামী ২৩ আগস্ট চকরিয়া সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল। মুক্ত পরিবেশে সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলেই বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ সমর্থকদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ও উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে।
বহুল প্রতীক্ষিত এই সম্মেলন ঘিরে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি, বিভিন্ন কর্মসূচি এবং সাংগঠনিক তৎপরতা। নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে, সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হতে যাচ্ছে দলের নতুন শক্তি। বিগত সরকারের আমলে নির্যাতন, জেল-জুলুমে পিষ্ট নেতাকর্মীরা এখন সম্মেলন সফল করতে গত দশ দিন ধরে নিরলসভাবে মাঠে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে মাঠ পরিষ্কার, প্যান্ডেল নির্মাণ ও মঞ্চ তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন এবং আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রস্তুতি নিয়ে বার্তা দেবেন বলে জানা গেছে। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট হাসিনা আহমেদ, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন চকরিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলহাজ্ব এনামুল হক এবং সঞ্চালনায় থাকবেন সদস্য সচিব এম. মোবারক আলী।
সম্মেলন সফল করতে উপজেলার প্রতিটি ইউনিটে কর্মীসভা, মতবিনিময় ও প্রচার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পুরো উপজেলায় বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। সম্মেলনস্থল নতুন সাজে সেজেছে, কক্সবাজার মহাসড়কসহ উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কজুড়ে নেতাকর্মীদের ছবি সংবলিত তোরণ, ব্যানার ও ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সভাপতি ও সম্পাদক পদে পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা চাইছেন সৎ, মেধাবী, পরিচ্ছন্ন ও কর্মীবান্ধব নেতৃত্ব।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনের নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বিকেল ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হবে। জাতীয় ও দলীয় সংগীত পরিবেশন, উদ্বোধন ও অতিথিদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রথম অধিবেশন শেষ হবে। এরপর অনুষ্ঠিত হবে কাউন্সিল অধিবেশন।
২০২০ সালের ১২ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল সর্বশেষ চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সম্মেলন। সে সময় সভাপতি ছিলেন আনছারুল ইসলাম বাবুল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফখরুদ্দিন ফরায়েজী। মেয়াদ শেষ হলে কমিটি বিলুপ্ত হয় এবং আহ্বায়ক করা হয় শাহজাহান চৌধুরীকে। পরবর্তীতে তার মৃত্যুতে এনামুল হক আহ্বায়ক ও অধ্যাপক ফখরউদ্দিন ফরায়েজীকে সদস্য সচিব করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। চলতি বছরের ২৪ জুলাই ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ৫ আগস্ট আগের কমিটি বিলুপ্ত করে এনামুল হককে পুনরায় আহ্বায়ক ও মোবারক আলীকে সদস্য সচিব করে দুই সদস্যের একটি নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
দীর্ঘদিন পর মুক্ত পরিবেশে সম্মেলন আয়োজিত হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা। সম্মেলনে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটতে পারে বলে জানিয়েছে সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটি। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশ ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো হচ্ছে। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সম্মেলন উপহার দিতে গঠন করা হয়েছে শক্তিশালী বাস্তবায়ন কমিটি। এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সাবেক ছাত্র ও যুবনেতা জাহাঙ্গীর আলম ভুট্টোকে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আছেন লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মানিক, আলী আহমদ মেম্বার, আলহাজ্ব কুতুব উদ্দিন এবং উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি এ এম ওমর আলী। এছাড়া আরও সাতটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে যারা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।
নতুন নেতৃত্ব নিয়ে দলের ভেতরে যেমন কৌতূহল আছে, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও রয়েছে আগ্রহ। নবীন নেতৃত্ব আসবে নাকি প্রবীণরাই নেতৃত্বে থাকবেন, সে প্রশ্নে আলোচনা চলছে সর্বত্র। তবে দলীয় সূত্র বলছে, এবারের কমিটিতে চমক থাকতে পারে। যারা বিগত আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন এবং কোনো আপস করেননি, তারাই স্থান পেতে পারেন নতুন কমিটিতে। সাংগঠনিক দক্ষতা ও ত্যাগ বিবেচনায় নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠিত হতে পারে।
চকরিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক বলেন, সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে মাঠ পরিষ্কার, প্যান্ডেল নির্মাণ ও মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষ। লক্ষাধিক মানুষের সমাগমের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়ন কমিটি ও উপকমিটির সদস্যরা সবাই দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন।
সদস্য সচিব এম মোবারক আলী জানান, ২৩ আগস্টের সম্মেলন ঘিরে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এটি চকরিয়া উপজেলা বিএনপির ইতিহাসে স্মরণীয় সম্মেলনে পরিণত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর ভুট্টো বলেন, সম্মেলন সফল করতে প্রতিটি ইউনিটে সাংগঠনিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। মতবিনিময় সভা ও প্রচারণা চালিয়ে নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর মুক্ত পরিবেশে এমন একটি সম্মেলন হতে যাচ্ছে, যা নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উজ্জীবন ও আশাবাদের সঞ্চার করেছে। আশা করছি, একটি সফল ও ঐতিহাসিক সম্মেলন উপহার দিতে পারব।
