সিবিএন:
সাতরঙা ভারুয়াখালী একটি একাডেমিক মানসম্পন্ন, তথ্যবহুল ও দলিলভিত্তিক আঞ্চলিক ইতিহাস গ্রন্থ, যেখানে চারশো বছরের ইতিবৃত্তের সুনিপুণ চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে। লিখেছেন বিশিষ্ট ব্যাংকার আব্দুল হামিদ।
বইটির পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে মধুর বিস্ময়। অধ্যায়ে অধ্যায়ে কালো অক্ষরে বপন করা আছে বিস্ময়-বীজ, লুকায়িত আছে তুতেনখামেনের গুপ্তধন।
গ্রন্থটি কেবল ভারুয়াখালীর জন্য নয়, এটি বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রতিটি জনপদের জন্য প্রাসঙ্গিক।
যুগ-ঝোঁকের সর্বগ্রাসী জলস্রোতে বানভাসিদের মাঝেও কিছু আলোর পথের যাত্রী দাঁড়িয়ে যান সিনা টান টান করে। প্রচণ্ড ঝড় তুফানের মাঝেও ‘বদর, বদর’ বলে তারা অকূল অর্ণব জয় করে নোঙ্গর প্রত্যাশা করেন। জীবনের সমুদ্র সফেন জয় করা এসব মহৎ প্রাণেরা আসলে তাড়িত হন সরণদ্বীপের সোনালি আহবানে। এ আহ্বান সাইরেন-সঙ্গীতের চেয়েও মোহময়, মায়াবী। দিগ-দিগন্তে, ইথারে ইথারে তারা শুনতে পান, হেনরি ডেভিড থরোর ভাষায়, ” Different drummer ” এর আহবান-ধ্বনি। ব্যাংকার ও লেখক আবদুল হামিদ এমনই ভিন্ন-মাদল শুনিয়ে সরণদ্বীপের একজন দুরন্ত অভিযাত্রী।
আবদুল হামিদ তাঁর “সাতরঙ্গা ভারুয়াখালীর “ইতিহাস শীর্ষক এই ‘Voyage long and strange’ সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেছেন, গন্তব্যে নোঙর ফেলেছেন। এ যেন ময়রার প্রশিক্ষণ ছাড়াই উপাদেয় মিষ্টান্ন তৈরির মতোই দূরুহ কাজ তিনি সম্পাদন করেছেন । মনস্বী পাঠকের জন্য পুরো বইটিই রসে টৈটম্বুর এক রসগোল্লা। স্মৃতিপ্রত্ম খুঁড়ে এ বই কিছুটা বেদনা জাগায় আর আমাদের সময়-ভ্রমণে নিয়ে যায় অতীত নামের সে ভিনদেশে।
আঞ্চলিক ইতিহাসের মতো কাষ্ঠং শুষ্কং বিষয়ের বইও যে কতটা সরস হতে পারে সেটার একটা উত্তম নমুনা হতে পারে এ বই। বইটির পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে মধুর বিস্ময়। অধ্যায়ে অধ্যায়ে কালো অক্ষরে বপন করা আছে বিস্ময়-বীজ, লুকায়িত আছে তুতেনখামেনের গুপ্তধন।
শুধুমাত্র একটা বই লিখতে গিয়ে লেখক রকমারি.কম ও অন্যান্য মাধ্যম থেকে কিনেছেন পঞ্চাশটা বই! লেখক হামিদ নিজেকে যেন রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পের নায়ক অদ্বৈতচরণে পরিণত করেছেন যার জীবনের লক্ষ্য হল প্রয়োজনে ‘ঋণং কৃত্বা বহিং পঠেৎ ‘ অর্থাৎ ঋণ করে হলেও বই পড়া। লেখকের এই আগ্রাসী পঠনপাঠন সাতরঙা ভারুয়াখালীর ছত্রে ছত্রে বিধৃত হয়েছে। পুরো বইটিই উৎসুক পাঠকের জন্য বিশেষত: কক্সবাজার আর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঠকবৃন্দের জন্য বইবাহিক মনোতৃপ্তি , বুদ্ধিবৃত্তিক চিত্তপরিতোষ।
সাতরঙ্গা ভারুয়াখালী” সত্যি এক ভোরের নরম আলোয় কচি নেবুর অলৌকিক ঘ্রাণ – এ যেন বটের লাল ফল আর ভাঁটফুলের শুভ্র রঙ্গিন হাসির মোহনীয় রসায়ন।
