এম. এ. আজিজ রাসেল, কক্সবাজার ;
কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ বলেছেন, “মানব পাচার একটি সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক অপরাধ। কক্সবাজার এ অপরাধের একটি আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মামলা জট ও আদালতে জনবল সংকটের কারণে মানব পাচারের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এছাড়া সাক্ষীরা সময়মতো আদালতে হাজির না হওয়ায় প্রমাণের অভাবে অনেক পাচারকারী শাস্তি থেকে রেহাই পাচ্ছে। তাই মানব পাচার প্রতিরোধে কক্সবাজারে একটি স্থায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠন করা জরুরি। তবেই এই অপরাধের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।”
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে কক্সবাজারের হোটেল সী প্যালেসের হলরুমে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সহযোগিতায় বিশ্ব মানব পাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে “মানব পাচার: একটি সংগঠিত অপরাধ ও শোষণ” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সীমা জহুর।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সিদ্দিক, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আক্তার হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রবিউল আলম, যুগ্ম জেলা জজ মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী এবং আইওএম-এর প্রোটেকশন প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সাদিয়া আলিম।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার সাজ্জাতুন্নেছা এবং সিনিয়র সহকারী শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনার খোদদাদ হোসেন।
সভায় বক্তারা বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারণ মানুষকে ‘ফ্রি ভিসা’, ‘উচ্চ বেতনের চাকরি’ কিংবা ‘বিয়ের প্রলোভন’ দেখিয়ে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে—বিশেষত সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় ট্রলারে করে বা সৌদি আরব, লেবানন, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। এতে করে হাজারো মানুষের স্বপ্ন প্রতিনিয়ত ভেঙে যাচ্ছে। কেউ উন্নত জীবনের আশায়, কেউ দারিদ্র্য থেকে মুক্তির আশায় পাচারকারীদের ফাঁদে পড়ছেন এবং অনেকে মৃত্যুর মুখেও পড়ছেন।
তারা আরও বলেন, পাচার চক্রের নিম্নস্তরের সদস্যরা আইনের জালে ধরা পড়লেও মূল পরিকল্পনাকারী ও মাফিয়া সদস্যরা থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তাই মাফিয়াদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা এবং মানব পাচার রোধে সর্বস্তরে জনসচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান বক্তারা।
