সিবিএন ডেস্ক:
সংস্কার ও নির্বাচনের পথরেখা নির্ধারণে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫’ এর খসড়া নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি বিপরীত অবস্থানে দাঁড়িয়েছে।
বিএনপি সনদ খসড়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও, জামায়াত একে অসম্পূর্ণ ও বিপজ্জনক বলছে। এনসিপি জানিয়েছে, আইনি কাঠামোর নিশ্চয়তা না পেলে তারা সনদে সই করবে না।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ২১তম দিনের সংলাপে এই অবস্থান প্রকাশ করে দলগুলো। খসড়ায় সংস্কার কমিশন গঠন, দুই বছরে সাংবিধানিক ও আইনি সংস্কারের অঙ্গীকার এবং সাত দফা কর্মপরিকল্পনা রয়েছে।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন,
“সনদের অঙ্গীকারের বিষয়ে আমরা একমত। ভাষাগত সংশোধনী থাকতে পারে। এর বাস্তবায়নে দুই বছর সময় দেওয়া নিয়েও বিএনপি একমত।”
অন্যদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. তাহের বলেন,
“খসড়া অসম্পূর্ণ, কিছু অংশ বিপজ্জনক। এটি চূড়ান্ত হলে সনদ গ্রহণ করা যাবে না। সনদে গণভোট বা আইনি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বৈধতা দিতে হবে।”
এনসিপি সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানান,
“সনদকে লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার (এলএফও) হিসেবে স্বীকৃতি চাই। মৌলিক সংস্কারগুলো অন্তর্ভুক্ত না হলে সই করার প্রশ্ন নেই।”
তত্ত্বাবধায়ক ও নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়েও মতভিন্নতা
প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ঐকমত্য হয়নি। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের প্রতিনিধির সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করবে। ব্যর্থ হলে দুইজন বিচারপতিকে অন্তর্ভুক্ত করে ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জামায়াতসহ অনেক দল এই প্রস্তাবে একমত হলেও বিএনপি চাইছে সংসদে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান।
নারী প্রতিনিধিত্বে বিএনপি ৫–১০% ধাপে ধাপে বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে; জামায়াতসহ ছয় ধর্মভিত্তিক দল ২০% নারী প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তাবে রাজি হয়নি। ফলে কমিশন সংশোধিত প্রস্তাবে বলেছে, কমপক্ষে ২০% আসনে নারী প্রার্থী দিতে হবে।
অন্যান্য প্রস্তাব
বিএনপি দুর্নীতি দমন কমিশন, পিএসসি, সিএজি ও ন্যায়পাল নিয়োগকে আইনের মাধ্যমে করতে চায়, সংবিধানে যুক্ত করতে রাজি নয়।
জামায়াত সনদের বৈধতা নিশ্চিতে গণভোট দাবি করেছে। এনসিপি বলেছে, আইনি নিশ্চয়তা ছাড়া সনদ গ্রহণ করবে না।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন,
“আমরা প্রায় ঐকমত্যের কাছাকাছি এসেছি। বুধবারের লিখিত প্রস্তাব অধিকাংশ দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশা করছি।”
