পেকুয়া প্রতিনিধি:

অসহায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবার অধিকার নিশ্চিত করতে এবার সরাসরি মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। “জুলাই পূর্ণজাগরণ ২০২৫” উপলক্ষে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় আয়োজিত এক ব্যতিক্রমী মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন অন্তত পাঁচ শতাধিক মানুষ। ঘূর্ণিঝড়, লকডাউন কিংবা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলবাসী বরাবরই অবহেলিত থাকলেও এবার তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের সামরিক বাহিনীর অন্যতম শাখা—নৌবাহিনী।

সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুর ২টা থেকে মগনামা ইউনিয়নের দক্ষিণ মগনামা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে এই চিকিৎসা ক্যাম্পের আয়োজন করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পেকুয়া সাবমেরিন ঘাঁটি। স্থানীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে শত শত নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ সকাল থেকেই সেখানে ভিড় করতে থাকেন। প্রবল বর্ষণের মধ্যেও সেবা গ্রহণে মানুষের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।

চিকিৎসা সেবা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহের পাশাপাশি রোগীদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সচেতনতামূলক দিকনির্দেশনাও দেন চিকিৎসকরা। কেবল সাধারণ চিকিৎসা নয়, রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, চর্মরোগ ও শিশুরোগ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়।

মেডিকেল ক্যাম্পটি তত্ত্বাবধান করেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর লে. কমান্ডার ও পেকুয়া সাবমেরিন ঘাঁটির সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. মো. এনামুর রহমান। তাঁর নেতৃত্বে নৌবাহিনীর অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল এ সেবা কার্যক্রমে অংশ নেয়।

ডা. এনামুর রহমান বলেন, “আমরা চাই দেশের প্রতিটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যেন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। জাতীয় পুনর্জাগরণ উপলক্ষে এই কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। পেকুয়াসহ উপকূলীয় এলাকায় আমাদের এই কার্যক্রম নিয়মিত চলবে।”

চিকিৎসা নিতে আসা দক্ষিণ মগনামার বাসিন্দা রহিম উদ্দিন বলেন, “বছরের পর বছর ধরে একখান ভালো চিকিৎসা পাই না। আজকে ফ্রি চিকিৎসা, আবার ওষুধও দিছে। আমরা গরিব মানুষ, এইটা অনেক বড় পাওয়া।”

স্থানীয় নারী নুরতাজ বেগম বলেন, “সারাদিন লাইনে দাঁড়ায়া ছিলাম, কিন্তু কষ্ট মনে হয় নাই। ডাক্তারের কাছে বলার মতো সুযোগ পাইছি, উনারা খুব সুন্দরভাবে দেখছে।”

বাংলাদেশ নৌবাহিনী সাধারণত সমুদ্র নিরাপত্তা, জাহাজ প্রতিরক্ষা ও জলসীমা নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত থাকলেও বিগত কয়েক বছর ধরে তারা জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এর আগে নদীভাঙন রোধ, ত্রাণ বিতরণ, করোনা পরিস্থিতিতে হাসপাতাল স্থাপন, এবং উপকূলীয় এলাকার স্কুল-কলেজে সহায়তাসহ নানা কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ দেশজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে পেকুয়ার মগনামায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি আধুনিক সাবমেরিন ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এটি দেশের সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই ঘাঁটিকে ঘিরে ভবিষ্যতে উপকূলীয় অঞ্চলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নেও নৌবাহিনীর ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।