সিবিএন:
কক্সবাজার সরকারি কলেজে শিক্ষার মানোন্নয়ন, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে ১৯ দফা দাবি জানিয়েছে কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রদল। আজ (২৩ জুলাই) কলেজ অধ্যক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে এসব দাবি উত্থাপন করে সংগঠনটি।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১. কলেজের প্রত্যেক ক্লাস রুম স্মার্ট ক্লাস রুমে রূপান্তর নিশ্চিত করতে হবে। উল্লেখ্য ইতিপূর্বে কক্সবাজার সরকারি কলেজে বাস্তবায়ন হওয়া কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিইডিপি) এর প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল কলেজের প্রতিটি ক্লাস রুমকে স্মার্ট ক্লাস রুমে রূপান্তর নিশ্চিত করা।
২. স্নাতক (অনার্স ও পাস) এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণির ক্লাস সপ্তাহে ৫ দিন চালুর ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. কলেজে বিদ্যমান সকল বিষয়ে মাস্টার্স চালু করতে হবে এবং যুগোপযোগী বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. কলেজের যাবতীয় শ্রেণি কার্যক্রম বিসিএস ক্যাডার শিক্ষকদের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।
৫. কলেজের কম্পিউটার ল্যাব, ল্যাংগুয়েজ ল্যাবসমূহ আধুনিকায়ন করে তা ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
৬. কলেজের মেইন গেটের পশ্চিম পাশের অধৈধ দোকানগুলো উচ্ছেদ করতে হবে এবং ভূমিদস্যু অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে কলেজের বেহাত হওয়া সরকারি ভূসম্পত্তি পুনরুদ্ধার করতে হবে।
৭. ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ফি ও বাড়তি ফি আদায় বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে পরীক্ষার নামে বাড়তি ফি আদায় করা যাবে না। সবক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ ফি চার্ট প্রকাশ করতে হবে।
৮. মজলুম ও অসহায় কর্মচারীদের উপর দমন পীড়ন পরিহার করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় জনবল ছাঁটাই করে কলেজের ব্যয় হ্রাস করে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে আদায় করা ফি’র পরিমাণ কমাতে হবে।
৯. কালচারাল ক্লাব, রিসার্চ ক্লাব, স্পোর্টস ক্লাব, বিতর্ক ক্লাব প্রভৃতি গঠন করতে হবে এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। এসবের কার্যক্রম দক্ষ ও বিতর্কের উর্ধ্বে এমন শিক্ষক দ্বারা পরিচালনা করতে হবে।
১০. ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাসগুলোতে যাবতীয় আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস কতিপয় ছাত্রসংগঠনের প্রভাব মুক্ত করে কলেজ ক্যাম্পাসে সকল দল ও মত এর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
১১. কলেজের দরিদ্র তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে প্রকৃত দরিদ্র শিক্ষার্থীদের হাতে এই তহবিলের সহায়তা পৌঁছে দেয়ার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১২. ডে কেয়ার সেন্টার, ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার, ছাত্রী কমনরুম, ছাত্রীদের নামাজ কক্ষ প্রভৃতি নিশ্চিত করতে হবে।
১৩. কলেজ ক্যাম্পাস থেকে অবৈধ টং দোকানগুলো অপসারণ করে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুপরিসর এবং স্বল্প মূল্যে মানসম্মত খাবার পরিবেশন নিশ্চিত করা যায় এমন একটি ক্যান্টিন স্থাপন করতে হবে।
১৪. ২০০৯ সাল থেকে বিগত ১৬ বছরের কলেজের ৩০টি খাতের হিসাব ছাত্র নেতৃবৃন্দসহ ছাত্র-ছাত্রীদের দেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং যাবতীয় দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
১৫. উন্নয়নের নামে হরিলুটকারী হিসেবে চিহ্নিত ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ, প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দোষী ছাত্রদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে এবং দোষী শিক্ষক-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করতে হবে। তাছাড়া সর্বদলীয় ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে বিদায়ী অধ্যক্ষের নিকট প্রদত্ত তালিকাভুক্ত ফ্যাসিস্টের দোসর ও চিহ্নিত দূর্নীতিবাজ শিক্ষক-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণপূর্বক কলেজের যাবতীয় কর্মকাণ্ড থেকে তাদের বিরত রাখতে হবে।
১৬. কলেজের ১৫ কানি ধানী জমি প্রতি মৌসুমে যথাযথ ও উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় নিলামের মাধ্যমে ইজারা দেয়া নিশ্চিত করতে হবে।
১৭. ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপদে কলেজে আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে কলেজ বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৮. কলেজের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও সেমিনার গ্রন্থাগারগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে এবং পর্যাপ্ত একাডেমিক ও গবেষণাধর্মী বই-পুস্তক সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
১৯. কলেজে একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ মেডিকেল সেন্টার স্থাপন করতে হবে। ইতিপূর্বে নাম ফলক সর্বস্ব মেডিকেল সেন্টার স্থাপনের নেপথ্যে অর্থ আত্মসাতকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
ছাত্রদল স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেছে, এসব দাবি বাস্তবায়িত হলে কলেজের শিক্ষা, পরিবেশ, স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তার মান বৃদ্ধি পাবে এবং কক্সবাজার সরকারি কলেজ দেশের অন্যতম মডেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
ছাত্রদল আশা প্রকাশ করেছে, অধ্যক্ষের নেতৃত্বে কক্সবাজার সরকারি কলেজ দ্রুত এই দাবিগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
