আবদুর রশিদ, নাইক্ষ্যংছড়ি :

মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় আরাকান আর্মির পুঁতে রাখা মাইন সাধারণ মানুষের জন্য মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি মানবিক সহায়তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তাদের সহানুভূতিশীল ও মানবিক ভূমিকাই সীমান্তবাসীর আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়া সীমান্ত এলাকায় মাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত চারজন বাংলাদেশি নাগরিককে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি)। বিজিবি মহাপরিচালকের নির্দেশনায় এবং ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম খায়রুল আলম, পিএসসি-এর তত্ত্বাবধানে এই সহায়তা প্রদান করা হয়।

সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ কৃষিকাজ, গবাদিপশু চরানো বা জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রায়ই মাইন বিস্ফোরণের ঝুঁকিতে পড়ছেন। অনেকেই প্রাণ হারাচ্ছেন, কেউ কেউ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় বিজিবির মানবিক সহায়তা কার্যক্রম নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয়।

যাঁরা সহায়তা পেয়েছেন: মো. সোনা মিয়া (১৮), পিতা হাবিবুর রহমান, তুমব্রু সীমান্ত, নাইক্ষ্যংছড়ি, মো. আবু তাহের (২৮), পিতা মৃত আবুল হোসেন, নাইক্ষ্যংছড়ি, মো. মনছুর আলম (৩০), পিতা সিরাজ মিয়া, তুলাতলি, উখিয়া, মো. করিম হোসেন (২০), পিতা এস আলম, তুলাতলি, উখিয়া।

এই চারজনই সীমান্ত এলাকায় মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক ও মানসিক কষ্টে ছিলেন। বিজিবির আর্থিক সহায়তা শুধু সহানুভূতির নিদর্শন নয়, বরং এটি এক সাহস জোগানো বার্তা।

৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম খায়রুল আলম, পিএসসি বলেন, বিজিবি শুধু সীমান্ত সুরক্ষা নয়, দেশের জনগণের সেবায়ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মাইন বিস্ফোরণে আহত, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বা অসহায় মানুষের পাশে আমরা সবসময় ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব।”

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ এবং সাধারণ মানুষ বিজিবির এ মানবিক ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। তাঁদের মতে, সীমান্ত সুরক্ষা ও মানবিক সহায়তা একসাথে চালানো সহজ নয়, কিন্তু বিজিবি তা নীরবে করে যাচ্ছে। এই আচরণই তাদের প্রতি মানুষের আস্থা আরও সুদৃঢ় করেছে।

বর্তমানে সীমান্ত অঞ্চলের সবচেয়ে বড় হুমকি মাইন বিস্ফোরণ। এমন পরিস্থিতিতে বিজিবির এ ধরনের সহায়তা কার্যক্রম দেশের অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর জন্যও অনুসরণযোগ্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

৩৪ বিজিবির এই মানবিক উদ্যোগ প্রমাণ করে- বিজিবি মানে শুধু সীমান্ত রক্ষাকারী নয়, বরং বিপদের দিনে মানুষের পাশে থাকা এক বিশ্বস্ত বন্ধু।”