জুলাই বাংলার ইতিহাসে রক্তে লেখা দ্বিতীয় বৃহৎ আন্দোলন, যা কোটা আন্দোলনের সূত্র ধরে ছাত্রজনতার বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের রূপ নেয়। যেখানে লুকিয়ে আছে জুলাই যোদ্ধাদের বীরত্ব, সাহস ও রক্তস্নাত গল্প, পরিবারের আর্তনাদ।
‘বর্ষপূর্তিতে জুলাইয়ের স্মৃতিচারণ’ শীর্ষক পাঠচক্র আয়োজন করে কক্সবাজার জেলা বন্ধুসভা। এতে বন্ধুসভার বন্ধুদের বিপ্লবের কথা উঠে আসে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) প্রথম আলোর আঞ্চলিক কার্যালয়ে এই পাঠচক্র অনুষ্ঠিত হয়।
জুলাই স্মৃতিচারণে উঠে আসে— কক্সবাজারে বিপ্লবের সূচনা ঘটে কক্সবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের হাত ধরে। শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬ জুলাই বিকেল ৩টায় আন্দোলনের ডাক দেওয়ার কথা থাকলেও সকালেই ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে আন্দোলনের সূচনা হয়। শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের প্রবেশপথ লিংক রোড চত্বরে যাওয়ার পথে কক্সবাজার সরকারি কলেজের সামনে হামলার শিকার হন। এতে হামলা চালায় সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিব ও তাঁর অনুসারীরা। এতে বহু শিক্ষার্থী আহত হন।
হামলার পর শহরের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা বিকেলে লিংক রোড চত্বরে একত্রিত হন এবং আন্দোলনটি আরও বিস্তৃত হয়। শিক্ষার্থীদের মিছিল লিংক রোড থেকে টার্মিনাল হয়ে শেষ হলেও বড় একটি অংশ শহরের দিকে এগিয়ে যায়। লালদিঘীর পাড় এলাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের কাছে পৌঁছালে আবারও হামলার শিকার হন তারা। সংঘর্ষে ‘ফু দিয়ে উড়িয়ে দিব’ বলা ছাত্রলীগের রাজিব নিজেই আহত হন।
রক্ত দিয়ে শুরু হওয়া এই আন্দোলন শেষ হয় ৩৬ জুলাই বিজয় উল্লাসের মধ্য দিয়ে। বিপ্লবী ছাত্রজনতার বিক্ষোভে দেশত্যাগে বাধ্য হয় ফ্যাসিস্ট সরকার শেখ হাসিনা ও তাঁর দলবল।
স্মৃতিচারণে জেলা বন্ধুসভার সহসভাপতি আবদুল নবী বলেন, “জুলাই আন্দোলনে মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। শহরের পেট্রোল পাম্প এলাকায় ১৮ জুলাই কানের পাশ দিয়ে পুলিশের গুলি যাওয়া এবং পিছনে এক ভাই সেই গুলিতে আহত হওয়া দেখে ভেবেছিলাম হয়তো আজই আমার শেষদিন। পুরো শহর অন্ধকার। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশ, বিজিবি একসাথে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। রক্তাক্ত শরীর নিয়ে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। মামলার আসামি হয়েছি, বাসায় থাকতে পারিনি। সকাল থেকে সন্ধ্যা আন্দোলন, রাতে নির্ঘুম সময় কেটেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আন্দোলনের কারণে চাকরি গেছে, আয়ের পথ বন্ধ হয়েছে। এরপরও হাল ছাড়িনি। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালানোর পর বিজয় মিছিল শেষে ফিরে যাই মায়ের কাছে। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে শুরু হয় সংস্কার কাজ।”
সাধারণ সম্পাদক উলফাতুল মোস্তফা বলেন, “আমি গর্বিত যে আমি ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিতে পেরেছিলাম। সেই সময়কার সাহস, ঐক্য আর ত্যাগ আজও আমার মনে গভীর ছাপ রেখে গেছে। রাস্তার আন্দোলন, স্লোগানে ভরা দিনগুলো এখন ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়। আমরা চেয়েছিলাম স্বৈরশাসকের পতন, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। এই অভিজ্ঞতা আমাকে আজও অনুপ্রেরণা দেয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে।”
সাধারণ সম্পাদক উলফাতুল মোস্তফা সঞ্চালনায় এতে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি আবদুল নবী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারগোব মোর্শেদ, দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক তায়েফ বিন কাদের, কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ শামীম ও মোহাম্মদ আলফাজ।
