টেকনাফ সংবাদদাতা ;
কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে টানা চার মাস ধরে। এ কারণে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শতাধিক আমদানি-রফতানিকারক। গুদামে রাখা কোটি টাকার পণ্য পচে নষ্ট হয়ে গেছে, কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন প্রায় দেড় হাজার বন্দর শ্রমিক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো স্থলবন্দর এখন কার্যত নিস্তব্ধ—গুদাম তালাবদ্ধ, নেই কোনো পণ্যবোঝাই ট্রলার কিংবা ব্যবসায়ীর আনাগোনা। নাফ নদীর ঘাটটিও ফাঁকা। বন্দরের মাঠে এখন ছাগল-হাঁস চরে বেড়ায়। অথচ একসময় সরগরম থাকত এই স্থান।
ব্যবসায়ীরা জানান, রফতানির জন্য মজুত করা সিমেন্ট, আলুসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এক্সপ্রেস এজেন্সির প্রতিনিধি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, রাখাইন রাজ্যের দখলদার আরাকান আর্মির অনুমতি না পাওয়ায় মিয়ানমার পণ্য নিতে দিচ্ছে না। ফলে সীমান্ত বাণিজ্য কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় দুই দেশের সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র আমাদের প্রতিষ্ঠানেই প্রায় অর্ধ কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়েছে। অন্য ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। বন্দরের ব্যবসায়ী মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘১৫টি গাড়ির আলু ছিল, সবই নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ এ বিষয়ে কোনো পূর্ব নোটিশও আমরা পাইনি।’
শুধু ব্যবসায়ী নয়, বিপাকে পড়েছেন শ্রমিকরাও। শ্রমিক সর্দার আলম জানান, বন্দরে দেড় হাজার শ্রমিক রয়েছে, যারা চার মাস ধরে কাজ পাচ্ছেন না। দোকানপাট বন্ধ, পরিবার নিয়ে সবাই কষ্টে আছেন।
রাজস্ব বিভাগও রয়েছে অনিশ্চয়তায়। রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সোহেল উদ্দিন বলেন, গত চার মাসে বন্দরে কোনো পণ্য আমদানি-রফতানি হয়নি, ফলে রাজস্ব আদায়ও হয়নি। তবে কেন বন্দর বন্ধ, সে বিষয়ে তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানেন না।
কক্সবাজার চেম্বার সভাপতি আবু মোর্শেদ খোকা বলেন, আলোচনা ও কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। সীমান্ত বাণিজ্য সচল হলে শুধু ব্যবসায়ীরা নয়, অর্থনীতিও উপকৃত হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সালে সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য চালু হয়। কিন্তু চলমান সংকটে সেই উদ্যোগ এখন বড়সড় প্রশ্নের মুখে।
