সিবিএন ডেস্ক:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী নির্বাচনে কৌশলগত অগ্রাধিকার ও সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কাজ ত্বরান্বিত করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। আসনভিত্তিক জরিপে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন দলের নির্ভরযোগ্য তিনজন প্রতিনিধি, যাদের দায়িত্ব হচ্ছে বিভিন্ন আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক অবস্থা পর্যালোচনা করা।
জরিপে গুরুত্ব পাচ্ছেন অপেক্ষাকৃত তরুণ, মেধাবী ও ইমেজসম্পন্ন নেতারা। পাশাপাশি ২০০১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যারা দলীয় মনোনয়নে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তাদের অবস্থানও যাচাই করা হচ্ছে। তবে ২০১৮ সালের মতো এবার এক আসনে একাধিক ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়নপত্র দেওয়া হবে না বলে নিশ্চিত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, “এবার দলের সিদ্ধান্ত একক প্রার্থী নির্ধারণের; একাধিক প্রার্থীর সুযোগ থাকবে না।”
দলীয় সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিএনপির বিভিন্ন আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আগমনে কোথাও কোথাও নেতৃত্ব সংকট বা সংঘাত দেখা দেয়। এসব সমস্যার সমাধানে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে কয়েকটি আসনে নির্দিষ্ট নেতাদের সবুজ সংকেতও দেওয়া হয়েছে। তবে সেই আসনগুলোতেও এখনও একাধিক প্রার্থী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
বিএনপির গঠনতন্ত্রের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচনের জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সমন্বিতভাবে গঠিত পার্লামেন্টারি বোর্ড। তফসিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে সাক্ষাৎকার পর্ব ও চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া।
দলের একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, এই নির্বাচনে তরুণ, শিক্ষিত ও ইমেজসম্পন্ন প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অনেক প্রভাবশালী ও সিনিয়র নেতা এবার মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। একইসঙ্গে, মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের জন্য কিছু আসন ছেড়ে দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকার দুই-তিনটি আসনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মিত্রদের কাজ করতে ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই দল পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে চায় বিএনপি। ইতোমধ্যে এই নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছে পৌঁছে গেছে। বরিশাল বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, “আমরা দ্রুত কাউন্সিলের মাধ্যমে সকল কমিটি গঠন করব। শীর্ষ পর্যায় থেকে সে নির্দেশনা পেয়েছি।”
তবে বরিশালে জানুয়ারি থেকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ শুরু হলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। ভোলা জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ জানান, “আমরা কয়েক দফা সভা করেছি। আশা করছি, জুলাইয়ের মধ্যে জেলা কমিটিও গঠন করতে পারব।”
রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম জানান, সেখানে ধারাবাহিকভাবে কাজ চলমান রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহবুবুর রহমান শামীম বলেন, “হাইকমান্ডের নির্দেশে প্রতিটি ইউনিটেই কার্যক্রম চালু আছে।”
উত্তরাঞ্চলের এক সিনিয়র নেতা জানান, বড় দলে নেতৃত্ব প্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে কোথাও কোথাও অসন্তোষ দেখা দিলেও তা দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে। এ দফায় কমিটিতে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
ফরিদপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “আমরা এবার কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে না দিয়ে তৃণমূলের অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিকভাবে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন করছি। সাড়ে ১৫ বছর সাংগঠনিক স্থবিরতার পর এবার কর্মীদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে দলকে আরও কার্যকর ও প্রাণবন্ত করতে চাই।”
সবমিলিয়ে, বিএনপির সামনে একদিকে নির্বাচন, অন্যদিকে সংগঠন পুনর্গঠন—দুটি চ্যালেঞ্জ একসাথে মোকাবেলার গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রান্ত হচ্ছে।
