সংবাদদাতা:
রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে এনআইডি কার্ড বানিয়ে কোটি টাকা আয় করেছে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আক্তার কামাল।

১৭ জুন কক্সবাজার জেলা দায়রা জজ আদালতে অবৈধভাবে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র করার দায়ে সরকার বাদী করা মামলায় জামিনের জন্য গেলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত দেন।
উক্ত মামলায় এজাহারভুক্ত আরো ৩ জন আসামিকে কারাগারে পাঠান আদালত।

তারা হলেন, সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সেক্রেটারি সৈয়দ আলম (৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার), মহিলা মেম্বার হোসনে আরা বেগম ও নুরুল হক নামে একজন গ্রাম পুলিশ।

তথ্য সুত্রে জানা যায়, সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আক্তার কামাল গত ১০ বছরে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) করে দিয়েছে। প্রতিটি এনআইডি কার্ড করতে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা নেওয়া হতো।

আক্তার কামালের দ্বিতীয় বউ সুমাইয়া আক্তার রোহিঙ্গা মেয়ে। সুমাইয়া আক্তার বার্মায়া মৌলানা সাকেরের স্ত্রী। মৌলানা সাকের তার বউ সুমাইয়ার এনআইডি কার্ড করার জন্য ১ লাখ টাকা কন্ট্রাক হয় আক্তার কামালের সাথে। একপর্যায়ে সাকেরের বউ সুমাইয়াকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে করে ফেলেন আক্তার কামাল। সুমাইয়ার মা জন্মসূত্রে মায়ানমারের নাগরিক। রোহিঙ্গা সুমাইয়া মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাল্য বিয়ে করে সংসার করে আসছে আক্তার কামালের সাথে। অবৈধ কাগজপত্র তৈরি করে তার বউ সুমাইয়া, সুমাইয়ার ভাই ও তার শ্বাশুড়িকে অবৈধভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে দেয় আক্তার কামাল।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ২০২৩ সালে হজ্ব পালনে সৌদি আরব যাওয়ায় চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন করেন প্যানেল-১ আক্তার কামাল। সে-সময়ে আলাদিনের চেরাগ পেয়েছিলো আক্তার কামাল। অবৈধভাবে এনআইডি, জন্মসনদ, জাতীয় সনদ, ওয়ারিশ সনদ বাণিজ্য করে কোটি টাকা কামিয়ে নেই কামাল। তার সাথে যারা সহযোগী মেম্বার ছিলো তাদেরকে অল্পস্বল্প দিয়ে মানিয়ে নিয়ে মোটা অংকের টাকা তার পকেটে ঢুকিয়ে নিতেন।

একসময় অ্যমিনিটি ট্যুরিজমের সল্প বেতনের ট্যুর গাইড ছিলো আক্তার কামাল। গত ১৭ বছরের ফেসিস্ট আমলে সবকিছু পাল্টে গেলো তার জন-জীবন। অবৈধ আয়ে গড়ে তুলেছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। দ্বীপের কোটিপতি ক্ষ্যাত যুবলীগ নেতা আক্তার কামাল।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে অংশগ্রহণ করা স্টুডেন্টন্সদের তালিকা তৈরি করে পুলিশকে দিয়ে হয়রানি করেছিলো। এসি রুমে বসে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে মায়ানমারে চোরাকারবারি, মানবপাচার, মাদক কারবারিসহ তার সিন্ডিকেট গ্রুপকে।

টেকনাফ সীমান্তে চোরাচালানের নেপথ্যে ‘সেভেন স্টার’ শিরোনামে দেশের অসংখ্য জাতীয় পত্রিকা, অনলাইন নিউজ ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দীর্ঘ বছর ধরে এই সেভেন স্টার নিয়ন্ত্রণ করে আসছে যুবলীগ ক্যাডার এই আক্তার কামাল।
সেন্টমার্টিনে ইট, রড, সিমেন্ট, বালি, টাইলস প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও আক্তার কামালের জন্য তা পান্তাভাত। এসব মালামাল দ্বীপে নিতে তার কোনো অনুমতি লাগে না। আঙুলের ইশারা করলেই পৌঁছে যায় রড, সিমেন্ট, বালি, ইট, টাইলসসহ নির্মাণ সামগ্রী।
এভাবে অবৈধভাবে নির্মাণ সামগ্রী দ্বীপে নিয়ে রাতারাতি কোটি পতি হয়ে উঠে আক্তার কামাল। গত ১৫ বছরে সেন্টমার্টিনে প্রায় কয়েকশ হোটেল রিসোর্ট নির্মাণ করা হয় আক্তার কামালের নিয়ন্ত্রণে।
ঢাকার মালিকানাধীন কোনো রিসোর্ট সেন্টমার্টিন নির্মাণ কাজ করতে হলে আক্তার কামালের রড,সিমেন্ট,বালিসহ সকল নির্মাণ সামগ্রী তার কাছ থেকে ক্রয় করতে হবে। অন্যতাই রিসোর্ট করতে বাঁধা দেই কামালের নেতাকর্মীরা।

আক্তার কামাল অবৈধ ইনকামে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে গড়ে তুলেছে সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে বড় রিসোর্ট ‘সী ভিউ রিসোর্ট এন্ড স্পোর্টস”। আরো রয়েছে, সুনামগঞ্জে লাক্সারি হাউজ বোট, শ্রীমঙ্গল ও সাজেকে ইকো রিসোর্ট, কক্সবাজারে এপার্টমেন্টসহ অর্ধ কোটি টাকা দিয়ে তৈরি সার্ভিস বোট, স্প্রীড বোট, গাম বোট, অটো রিক্সা, ভ্যান, মটর বাইক, আকিজ গ্রুপের দ্বীপের একমাত্র ডিলারসহ ছোট বড় অর্ধশত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক এই যুবলীগ নেতা।

গত দেড় যুগে সেন্টমার্টিন দ্বীপে আক্তার কামালের উপরে কথা বলার সাহস কেও পায়নি। তার কালো টাকার কাছে সবার হার মানতে হয়েছে।

দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা হামিদ হোসেন বলেন, আক্তার কামাল আওয়ামীলীগের প্রভাব দেখিয়ে দ্বীপের অসংখ্য গরিব দুখি মানুষের জায়গা জমি দখল করে নিয়েছে। ৩৫০০ টাকার বেতনে স্কুলের প্যারা শিক্ষক ছিলো। কয়েক বছরে সে এখন দ্বীপের কোটিপতি। দুদক ও সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তরসহ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, এই যুবলীগ নেতার অবৈধ সম্পদের পাহাড় ক্রোক করা হোক এটাই সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসী সকলের দাবী।

দ্বীপের আরেক বাসিন্দা হারুন বলেন, দ্বীপের চারিপাশের বীচের মাটি কেটে লাখ লাখ টাকা কামিয়েছে আক্তার কামাল। একটা রুম ভরাট করতে ২০ হাজার টাকা দিতে হয় তাকে। সেন্টমার্টিনে ঢাকায়া যতগুলো রিসোর্ট রয়েছে সব রিসোর্টে প্রতি রুম ২০ হাজার টাকা কন্ট্রাকে প্রায় কয়েকশ হোটেল রিসোর্টে মাটি ভরাট করে দেয় আক্তার কামাল।